কাল্পনিক
কস্তুরী দাশ
সরু আঁকাবাঁকা একটা নীল নদীর ধারে, সবুজ ঢালু ঘাসজমিতে একটা লাল বাড়ি। দুটো মোরগ, ছ'টা মুরগি আর আটটা হাঁস নিয়ে লিং আর লিং এর বাবা মা থাকে সেখানে।
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই, লিং এর জানলার ধারে হলুদ সিডার গাছে রোজ একটা লাল ম্যাকাও এসে ডাকে। আজও এসেছে। ঘুম ভাঙতেই লিং ছুটলো বারান্দায়, সেখানে হেলানো চাল থেকে টুপিটুপিয়ে শিশির পড়ছে মাটিতে ঘাসের ওপর। ভোর ভোর শিশির স্নান করে ঝিকমিকিয়ে উঠছে ঘাসেরা। হেলে দুলে এ ওর গায়ে জল মাখিয়ে দিচ্ছে আনন্দে।
গরম গরম একবাটি সোনালী স্যুপ খেয়েই লিং ছুটলো নীল নদীটার ধারে। খাতা খুলে আঁকতে শুরু করলো নদীর ধারে বসে। আজ সারাদিন শুধু রঙ-তুলি-আঁকা।
দুপুর গড়িয়েছে অনেকক্ষণ। লিং এঁকে চলেছে। প্রথমে নদী, তারপর বাড়ি, তারপর ঘন জঙ্গল। সেখানে সূর্য ডোবে ডোবে। রঙ তুলিতে আকাশের রঙ নদীর বুকে লাল হয়ে উঠতেই, লিং এর মা জোরে জোরে ডাকলো। শুনতে পেলনা লিং।
তখনো আঁকার খাতায়, নদীর পাড়ে মাটির বিবর্ণ ঘাসগুলো রঙ করা হয়নি।
পাখিরা বাসায় ফিরছে। আকাশের রঙ ধূসর হচ্ছে ক্রমশঃ। তিনটে পাখি আঁকলো লিং। আলো কমে আসায় তিনটে পাখির রঙই কালো দেখাচ্ছে।
মা পাখিটা গাছের ডালের একবার এপাশ একবার ওপাশ করছে। টুইচ টুইচ ডেকে সাড়া চাইছে ছানাদের। আঁকার খাতায় গাছের ডাল, মা পাখি.. সবই তো কালো দেখাচ্ছে!
শুধু মা পাখির ডাক টা শোনা যাচ্ছে। লিং তো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। ছানাগুলো বড় পাজি তো!.. সাড়া দিচ্ছে না যে!..
বিকেল শেষ হতে চললো।
লিং এর বাড়ির চিমনি দিয়ে সুন্দর কেকের গন্ধ ভেসে আসছে। মা দু বার ডেকেছে। শুনতে পায়নি লিং। এবারে পিঠে পড়বে।
প্রায় অন্ধকার নদী তীরে, লিং এর ড্রয়িং খাতার ওপর হঠাৎই একটা সাদা পালক উড়ে এসে পড়লো।
লিং এর বন্ধু 'ব্লু'।
'ব্লু' একটা লম্বা গলা সারস। ওই দিয়ে গেল এই পালকটা লিং কে। কোনো শুভবার্তা আছে নিশ্চয়ই।
ম্যাপল গাছের কোটর থেকে মাথা বার করে 'বিক', বকলো লিং কে -'যাও বাড়ি যাও'..
'বিক' একটা সবুজ মাছরাঙা। লিং এর আরেক বন্ধু।
কিন্তু লিং কে তো থাকতেই হবে এখন এই অন্ধকার নদী তীরে, ম্যাপল গাছের নীচে। 'বুনো' এখনই আসবে। 'বুনো' হলো এই নীল নদীটায় বাস করা বিরাট এক স্যামন মাছ। লিং এর আরও এক বন্ধু। ওকে দেবে বলেই তো লিং এই আঁকাটা আঁকছে!..
ব্লু বিক বুনো আর লিং ওরা চারজন খুব বন্ধু। আকাশে রামধনু দেখা গেলে ওরা একসাথে গান গায়, বৃষ্টি পড়লে নাচে। ওরা খুব আনন্দে থাকে। কিন্তু মনখারাপ হলে.. মনখারাপ হলে, ওরা একসাথে ঘুরতে যায়।
সামনে জোরালো শীত। নদীর জল বরফ হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। 'বুনো' কে অনেকদিন দেখতে পাবেনা ওরা। তাই তো মনখারাপ!..
তাই তো বরফে চারপাশ ঢেকে যাওয়ার আগেই, দূরে কোথাও বেড়াতে যাবে ওরা চার বন্ধু। এঁকেবেঁকে চলা নীল নদীটা ধরে বুনো র পিঠে চড়ে ভেসে ভেসে যাবে লিং, ব্লু আর বিক ওদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে চলবে।
নীল নদীটা যে পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে বাঁক নিয়েছে , ঠিক সেইখানেই পাহাড়ের ঢালে ওক গাছেদের ব্নভূমিতে এক নতুন বন্ধু অপেক্ষায় আছে ওদের।
কে সেই বন্ধু, জানো..
সে হলো একটা হলুদ ক্যানারি পাখি। ওর নাম 'লুসি'। ওকে নিয়ে পাঁচজন হবে ওরা।
নদী তীরের এই সোনালী বনভূমিতে, ঝলমলে রোদ্দুরে আনন্দে মেতে উঠবে ওরা। আর 'বুনো' হাততালি দেবে জল থেকেই।
তুমিও কী বন্ধু হতে চাও..
তোমরা..
যেতে চাও!..যেখানে আঁকার খাতায় সব ফুটে উঠবে একটু একটু করে!..
*ছাত্রী, ১৯৯৪
অপূর্ব!
উত্তরমুছুনথ্যাংক ইউ মৌসুমী দি 🩷
মুছুনমন ভালো হয়ে গেলো, মনে হলো আমিও লিং এর বন্ধু হয়ে গেছি। হঠাৎ করে ছোটো বেলায় ফিরে গেলাম। এই ভালো লাগার রেশ অনেক দিন থেকে যাবে মনে মধ্যে।
উত্তরমুছুনঅনেক উৎসাহ পেলাম রে, ধন্যবাদ শম্পা 🩷
মুছুনঅপূর্ব বর্ণনা, মন ভোরে গেলো পরে I ❤️
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ রে রূপা 🩷
উত্তরমুছুনব্লু beak, লিং..আর বুনো র মতো বন্ধু চাই আমার...
উত্তরমুছুনকল্পনার সুরিয়াল জগৎ এ চলে গেছিলাম ..পড়তে পড়তে ...অপূর্ব লেখনী..
অনেক ধন্যবাদ ব্রতী.. এমন সব বন্ধু আমিও চাই 🥰
উত্তরমুছুন