অন্যরকম পুজো

 


 বিভাশ্রী দাস

পুজো আসে প্রতিবছর। মহালয়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহিষাসুরমর্দিনীর মাধ্যমে তার আগমন ঘটে এবং তা বিদায় নেয় দশমীর ঢাকের করুণ সুরে। ছোট থেকে বড় হওয়ার সাথে সাথে পুজোর মানে ধীরে ধীরে বদলে যায় সবার কাছে। একদম ছোট্টটি যখন ছিলাম বাবা মায়ের হাত ধরে কত যে ঠাকুর দেখতাম, বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকতাম সব আলোকসজ্জায় সাজানো মণ্ডপগুলোর দিকে। এই ছোট্ট মাথায় কত কি ভাবনা ঘুরপাক খেতো আর তার বহিঃপ্রকাশ হতো শত শত প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে। এখন একটু বড় হয়েছি, সেই আলোকসজ্জায় সাজানো সব মণ্ডপ দেখি, প্রশ্নও ঘোরে মাথায় অনেক। তবে পার্থক্যের মধ্যে এই যে সেগুলো এখন আর মা- বাবার সাথে খুব একটা দেখা হয়না, বেশিরভাগ সময় সঙ্গে থাকে প্রিয় বন্ধুরা। তবে হ্যাঁ বদলেছে আমার পুজো দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। আজ মনে প্রশ্ন জাগে ছোটবেলায় যাদের থেকে বেলুন কিনে, ফুচকা খেয়ে মন ভালো করতাম তাদের পুজোয় মন কেমন? কেমন আছে তারা? তাদের বাড়িতে কাছের মানুষ গুলোও কি পুজোয় তাদের সাথে সময় কাটাতে পারে? কত বাচ্চা বাচ্চা ছেলে-মেয়ে যাদের বয়সে আমি হাতে বেলুন নিয়ে ঘুরতাম, তারা এই বয়সে হাতে বাটি নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে শুধু কিছু পয়সা পাওয়ার আশায়, ওরাও হয়তো বেলুন কিনতে চায়। কিছুক্ষণের জন্যে মনের মধ্যে নেমে আসে স্তব্ধতা। তার পরক্ষণেই মনে হয় আমি কত ধনী, হয়তো অর্থের দিক থেকে নয়, তবে আমি আমার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সময় তো কাটাতে পারছি।

তবে এই স্তব্ধতা বেশিক্ষণ থাকে না ওদের হাসি মুখগুলো দেখে। হয়তো সব আনন্দ তারা পায় না, তবে তারা যেটুকু পায় সেইটুকুতেই যেন বেশ খুশি। পুজো বার বার আসে, শুধু বদলে যায় আমাদের বয়স আর মন দিয়ে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। আনন্দের সংজ্ঞা সবার জন্য সমান হয়না। আমরা সারা পুজো কত জায়গা ঘুরে, বাইরে খেয়ে আনন্দ করে ঠাকুর দেখেও আমাদের মনেহয় এবারে আনন্দ যেন কম হয়ে গেলো, অন্যদিকে যারা আমাদের আনন্দের নামমাত্র কিছু উপভোগ করতে পারে তাদের কাছে এই আনন্দই আকাশসমান।


**ছাত্রী, প্রথমঅর্ধবর্ষ, ২০২৫

ভূগোল বিভাগ, উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজ


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হিমালয়ের কঠিন ট্রেক; জংরি-গোচা লা

পায়ে পায়ে প্রাসাদ নগরী...

অপেক্ষা