ফাল্গুনী দে
তোরা
যে
যা
বলিস
ভাই
আমার
সোনার
হরিণ
চাই
নকুড়
বাবুকে মনে পড়ে
? প্রফেসর শঙ্কু
? সত্যজিৎ রায়ের
বিখ্যাত রহস্য
গল্পে মানুষের মন
পড়ে নেবার এবং
ভবিষ্যৎ বলে
দেবার নকুড় বাবুর
সেই অলৌকিক দক্ষতা
? যাঁকে নিয়ে প্রফেসর শঙ্কু পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর আমাজনের গভীর
জঙ্গলে এল ডোরাডোর রহস্য অনুসন্ধানে ? অথবা
স্যার ওয়াল্টার র্যালেই-এর
কথা? রানী প্রথম
এলিজাবেথ কে
কথা দিয়ে যিনি
রহস্য নগরী এল
ডোরাডোর পথে
পাড়ি দিয়েছিলেন সোনার
খোঁজে ? ইতিহাসের এমন
আশ্চর্য অনেক
ঘটনা জানা অজানার
বাইরে থেকে যায়
যা আমাদের কৌতুহলী মনকে বিস্ময়ে আবিষ্ট
করে তোলে।
মানুষ
মাত্রই ভ্রমণের উদগ্র
আকাঙ্ক্ষা লালন
করেন মনে মনে।
ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার এই নেশাই
তাকে করে তোলে
বোহেমিয়ান। পথে
পথে আপাত উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়িয়ে মানুষ
অচেনাকে চিনেছে,
অজানাকে জেনেছে। আবিষ্কার করেছে
খুঁজে বের করেছে
নানান রহস্যের নিত্য
নতুন দিগন্ত। এই
সুযোগে লেখক, কথক,
অনুসন্ধানকারীরা অনেকটা
কল্পনার সঙ্গে
কিঞ্চিৎ বাস্তব
মিলিয়ে বেশ
খানিক সুস্বাদু গল্প
রচনা করেছেন। মানব
ইতিহাসে এমন
অনেক রহস্যময় জনপদ,
নদ নদী, পাহাড়
পর্বতের অস্তিত্ব মানুষ বিশ্বাস করে
এসেছে চিরকাল। যেমন
দেবতাদের রোষানলে সাগরের নিচে তলিয়ে
যাওয়া প্লেটোর কিংবদন্তি দ্বীপ-নগরী আটলান্টিসের পৌরাণিক উপকথা।
অথবা জেমস মিল্টনের কল্প-উপন্যাসে তিব্বতের স্বর্গীয় উপত্যকা সংরি-লার কথা।
এইসব উপকথাকে
আমরা যেমন জনশ্রুতি বলে অস্বীকার করতে
পারি না তেমনই
কিংবদন্তি মনে
করে বাস্তবের আলোয়
স্পর্শও করতে
পারি না।
ছবি ১: এল ডোরাডো উপকথার গোয়াটা ভিটা হ্রদে স্নানযাত্রা পর্ব। সূত্র: ইন্টারনেট
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দক্ষিণ
আমেরিকার উত্তর
পশ্চিমে অধুনা
কলম্বিয়া দেশটিতে 'মুইসকা' নামক একটি
সভ্যতার বিকাশ
ঘটেছিল। এই
সভ্যতার অন্তর্গত বিস্তীর্ণ জনপদগুলি একজন মাত্র রাজার
অধীনে পরিচালিত হতো।
বংশপরম্পরায় রাজার
ছেলে রাজা হয়
কিন্তু এই মুইসকা
সভ্যতায় ছিল
উল্টো পুরাণ। এখানে
রাজার বোনের বড়
ছেলে পরবর্তী রাজা
হিসেবে অভিষিক্ত হন।
দায়িত্ব গ্রহণের আগে হবু রাজাকে
গুহায় অবস্থান করতে
হয়। নারীসঙ্গ, লবণ
খাওয়া এমনকি দিনের
আলোতে বাইরে যাওয়া
ছিল কঠোরভাবে নিষেধ।
অভিষেকের প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান পূর্বে
হবু রাজা কে
সোনার গুড়ো মাখিয়ে সাজানো হয়। তারপর
স্থানীয় গোয়াটা ভিটা হ্রদে স্নান
করে সূর্য দেবতার
উদ্দেশ্যে স্বর্ণ
সামগ্রী বিসর্জন দিতে হয়। স্থানীয় এই প্রথাটি এল
ডোরাডো গুজব ছড়িয়ে পড়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 'এল ডোরাডো' শব্দটি
স্প্যানিশ, যার
অর্থ 'স্বর্ণের তৈরি'।
স্প্যানিশরা মূলত
'এল হমব্রে ডোরাডো'
অর্থাৎ 'সোনায় খচিত
মানুষ' বা 'এল
রেই ডোরাডো' অর্থাৎ
'সোনায় খচিত রাজ্য'
কথাটি ব্যবহার করত
মুসাইকা উপজাতির এই প্রাচীন প্রথা
কে ব্যাখ্যা করতে।
দক্ষিণ আমেরিকার এই
উপজাতিটির কাছে
প্ল্যাটিনাম, সোনা
বা রুপোর মত
ধাতু খুব একটা
মূল্যবান ছিল
না। উজ্জ্বল রং
নমনীয় গড়ন এবং
রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে অলংকার
বা ভাস্কর্য নির্মাণে বেশি ব্যবহার হত।
আদিবাসীদের এমন
কেতা দস্তুর কান্ড
কারখানা দেখে
শুনে ইউরোপীয় হানাদারদের চক্ষু ছানাবড়া। তারা
ভাবলে নিশ্চয়ই আদিবাসীদের কোন গোপন অফুরন্ত সোনার খনি আছে।
হুয়ন মার্টিনেস নামক
এক নাবিকের বর্ণনায় এই সাম্রাজ্যের রাস্তাঘাট বাড়িঘর সবকিছু
ছিল সোনা দিয়ে
মোড়ানো। বর্ণনা
শুনে অন্যান্য ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা এই
শহরটিকে এল
ডোরাডো হিসেবে শনাক্ত
করে। আদিবাসীরাও এই
বর্ণনায় সায়
দিলে। এরপর থেকেই
শুরু হয়ে গেল
হ্রদের জল তোলপাড় করে সোনা অনুসন্ধান অভিযান। ইউরোপীয়দের এই বিরক্তিকর জিজ্ঞাসাবাদের যন্ত্রণা থেকে
মুক্তি পেতেই আদিবাসীরা সম্ভবত এই কাল্পনিক স্বর্ণ শহরের গল্প
বানাতে বাধ্য হয়েছিল। এই এল ডোরাডো
নিয়ে লোককথা সময়ের
সাথে সাথে বদলে
যায়। এটি শুরু
হয়েছিল একটি
সোনায় মোড়ানো মানুষের গল্প দিয়ে, তারপর
সেখান থেকে সোনার
শহর, সোনার রাজ্য
হয়ে পরবর্তীতে এটি
একটি সোনার সাম্রাজ্যের লোককথায় পরিণত
হয়।

ছবি ২: প্রাচীন দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং উপকূল মানচিত্র। সূত্র: ইন্টারনেট
এল
ডোরাডো স্বর্ণ নগরীর
উপকথা সত্যি অথবা
মিথ্যা সে যাই
হোক, আখেরে লাভ
কিন্তু উভয় দিক
থেকেই হয়েছিল। এই
প্রবন্ধের মূল
সূত্রটি বাঁধা
আছে লাভের সেই
অঙ্কের সমীকরণে। প্রাচীনকালে আলতামিরা গুহায়
আবিষ্কৃত সেই
পশু শিকারের ছবিগুলি আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম ? গুহার
দেওয়ালে কৃত্রিম এই হত্যাকাণ্ডের ছবি
এঁকে শিকারীরা মনোবল
সংগ্রহ করেছেন এবং
শিকারে সফল হয়েছেন। লুটেরা ইউরোপীয়রা কি
তাহলে নাকের সামনে
মুলো ঝোলানোর মত
এল ডোরাডোর গল্প
হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে, ব্রিটিশ স্প্যানিশ ফরাসি পর্তুগিজ অনুসন্ধানকারীদের দক্ষিণ আমেরিকা আবিষ্কারে উৎসাহিত করেছিল ? কারণ সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপিয়ানদের হাতের
সামনে বার্নিয়ারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সম্পদশালী দেশ হিসেবে ভারতবর্ষ তথা বাংলার নজির
ছিল, মিশরীয় সভ্যতার উদাহরণ ছিল। সুতরাং
দক্ষিণ আমেরিকার সম্ভাব্য বহুমূল্য স্বর্ণ
সম্পদ হাতছাড়া করতে
তারা নিতান্তই অপারগ
ছিলেন।
ইউরোপীয়দের এই অভিযানগুলি থেকে অন্য আরেকটি লাভ হয়েছিল। এল ডোরাডো অনুসন্ধানে সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা চষে বেড়ানোর ফলে উত্তর আমেরিকার অনেক আগেই এই ভূখণ্ডের মানচিত্র অনুসন্ধান সম্পূর্ণ হয়েছিল। পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালা থেকে শুরু করে পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত, অন্যদিকে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য অধ্যুষিত আমাজন নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নিখুঁত মানচিত্র সপ্তদশ শতাব্দীর আগেই সহজলভ্য হয়ে উঠেছিল। ৬.৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত আমাজনের জঙ্গল ছড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। এই জঙ্গলের অধিকাংশই ব্রাজিলে (৬০ শতাংশ) থাকলেও বলিভিয়া কলম্বিয়া ইকুয়েডর পেরু সুরিনাম ভেনিজুয়েলা ইত্যাদি নানান দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের নেশায় সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে ইউরোপীয়দের নৃশংস ভাঙচুরের কথা যদি ভুলেও যাই, আমাজনের মত এমন অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ দেবার জন্য বর্বর ইউরোপীয়দের ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য।
ছবি ৩: মুসাইকা উপজাতির রাজা। সূত্র: ইন্টারনেট
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর
আমরা কি খুব দ্রুত ফিনিশিং লাইনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ? দিন প্রতিদিন আমাদের চারপাশ কি ভীষণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে ? উন্নয়নের শিখণ্ডী সামনে দাঁড় করিয়ে জ্ঞানপাপীর মত আমরা কি আখেরে পরিবেশ কেই বধ করতে চাইছি ? আমাদের অহংকার লোভ জিঘাংসা কি শেষবেলার ছায়ার মত দীর্ঘতর হয়ে উঠছে ? আমাদের কি সত্যিই ফেরার কোন পথ নেই ? মোহনাকামী প্রবহমান নদীর মত সবই কি একমুখী ? বিজ্ঞানী গাস স্পেথ কিন্তু আমাদের সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন -- "I used to think the top environmental problems were biodiversity loss, ecosystem collapse and climate change. I thought that with 30 years a good science we could address these problems. But I was wrong. The top environmental problems are selfishness, greed and apathy.....and to deal with those we need a spiritual and cultural transformation.... and we scientists don't know how to do that."
একটি আক্ষেপ স্পষ্টতই ঝরে পড়ছে। পৃথিবীতে নিভৃত নির্জন অনন্ত শূন্যতায় ভরপুর মায়াময় দেশ বলে কি কিছু আর থাকবে না ? সেই নির্ভীক শিশুটি কোথায়, যে রবীন্দ্রনাথের মতো চিৎকার করে বলবে -- "দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,/ লও যত লৌহ লৌষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর/ হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,/ দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি," ?
ছবি ৪: ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে ক্রমবর্ধমান আগুন। সূত্র: ইন্টারনেট
অর্থাৎ 'নিভৃত সেই বিজনপ্রদেশ' নামে এই পৃথিবীতে আর কিছুই রইল না। একটু তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। বিগত ৩০ বছরে (১৯৯০-২০২০) জনপদ বিস্তারের প্রয়োজনে, বাড়তি খাবারের যোগান মেটাতে এবং অবশ্যই শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে আমরা পৃথিবীর ১০% বিজনপ্রদেশ হারিয়ে ফেলেছি। আন্টার্কটিকাকে বাদ দিলে রাশিয়া কানাডা আমেরিকা ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়া এই পাঁচটি মিলিত দেশ এমন এক ৭০% শেষতম পৃথিবীর অধিকারী যেখানে মানুষের পায়ের ছাপ পড়েনি। পৃথিবীর এই বহুচর্চিত কৌমার্যের অধিকাংশই ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য এবং নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি দিয়ে তৈরী। গ্লোবাল ফরেস্ট রিসোর্সেস অ্যাসেসমেন্ট, ২০২০ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৭ মিলিয়ন হেক্টর অরণ্য আমরা নির্বিচারে ধ্বংস করে চলেছি। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, বিশ্ব উষ্ণায়ন ইত্যাদি তার তথ্য সূত্রে প্রমাণিত সত্য।
আজ থেকে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন বছর আগে ইকোসিন যুগে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অববাহিকায় প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল আমাজন ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য। বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ৯ ফুট। জঙ্গলের ডাকেই বৃষ্টি আবার বৃষ্টির আশীর্বাদেই জঙ্গল -- প্রকৃতির কি বিচিত্র লীলা ! বহু স্তরীয় এই অরণ্যের এমনই নিবিড় ঘনত্ব যে দিনের বেলাতেও সেখানে যথেষ্ট অন্ধকার। জঙ্গলের বৃদ্ধি এমনই দ্রুত যে পথ কেটে কেটে ভেতরে প্রবেশ করলে সপ্তাহ খানেক পরে একই পথ চিনে ফেরত আসা প্রায় অসম্ভব। জায়গায় জায়গায় পচা এবং শুকনো পাতার স্তর প্রায় বুক পর্যন্ত গভীর। ফলে পাতার অতলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পৃথিবীর প্রতি ১০টি প্রজাতির মধ্যে ১টি প্রজাতি আমাজন অরণ্যের বাসিন্দা। এই জঙ্গলেই রয়েছে ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীটপতঙ্গ, ৪০ হাজার প্রজাতির বৈচিত্র্যময় গাছ-গাছালির, ২০০০ প্রজাতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী, ২২০০ প্রজাতির মাছ, ৪০০ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী। এছাড়া নানান অজানা প্রজাতির জীব যার আবিষ্কার আজও সম্ভব হয়নি। আমাজনের বিপুল জীববৈচিত্র্যের সম্ভার এমনই আশ্চর্যের। অন্যদিকে, সমগ্র পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন এখান থেকেই তৈরি হয়। অথচ পরিসংখ্যান বলছে আমাজনের এই জঙ্গলে প্রতি মিনিটে একটি ফুটবল মাঠের সমান জঙ্গল এলাকা উজাড় হয়ে যাচ্ছে। 'পৃথিবীর ফুসফুস' নামে পরিচিত ব্রাজিলের এই আমাজনের জঙ্গল সাম্প্রতিক কালের ভয়ঙ্করতম দাবানলের শিকার। জীব বৈচিত্র্যের নিরিখে এমন লেলিহান আগুন কতটা ভয়ংকর তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।

ছবি ৫: দাবানলে বিপর্যস্ত বন্যপ্রাণ। সূত্র: ইন্টারনেট
সমগ্র পৃথিবীজুড়ে জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা অপরিচিত নয় আবার অস্বাভাবিকও নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার জঙ্গলে দাবানল থেকে অস্ট্রেলিয়ার তৃণভূমির আগুন, মানুষের লোভের পাপে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। সূর্যের মুখ ঢেকে দিয়ে আকাশ কালো করে বিষ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে দূর দূরান্তের গ্রাম শহর পেরিয়ে দেশ বিদেশে। পশুপাখি গাছপালা নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষের এই অসীম চাহিদার রোষানলে। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ' উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে আগুনের বিস্তার মেপে জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে আমাজনের জঙ্গলে দাবানলের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে ৩৯,৭৫৯টি এবং ২০১৯ সালে ৭২,৮৪৩টি আগুনের ঘটনা (৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি) আগের সমস্ত রেকর্ডকে নস্যাৎ করে সমগ্র বিশ্বে মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ধোঁয়ার বিস্তার ২৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপকূল শহর সাও পাওলোর আকাশও ঢেকে দিয়েছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরাঞ্চলের রোরাইমা, একার, রোন্ডোনিয়া, মাতো গ্রোসো ডো সুল ইত্যাদি দূরবর্তী এলাকাগুলিতে। এই এলাকাগুলিতে গত চার বছরে (২০১৫ - ২০১৮) আগুন লাগার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। আগুন ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে। ভেনিজুয়েলায় ২৬ হাজার, বলিভিয়ায় ১৭ হাজার এবং কলম্বিয়ায় ১৪ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক অতীতে।

ছবি ৬: দাবানলের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে দেশ দেশান্তরে। সূত্র: ইন্টারনেট
কমবেশি আমরা সকলেই জানি জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ চারমাসের এই শুকনো মরশুমে আমাজনের জঙ্গলে দাবানল একটি প্রচলিত ঘটনা। যেহেতু এই জঙ্গলের মাটি জায়গায় জায়গায় অনুর্বর এবং জঙ্গলের মধ্যে প্রচুর আদিম উপজাতির মানুষের বসবাস, তারা চাষাবাদ, জ্বালানি সংগ্রহ অথবা পশুপালন ইত্যাদি প্রয়োজনে জমি পরিষ্কার করতে জঙ্গল কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। ব্রাজিলের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি-- "শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয় তবে এক্ষেত্রে দাবানলের প্রকোপে আগুন লাগেনি বলেই মনে করছেন তারা। সরকারি এবং বেসরকারি দ্বন্দ্ব যতই থাকুক, অনেক সময় জীবিকার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা এক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়।"
অন্যদিকে জলবায়ু বিজ্ঞানী কার্লোস নোব্রের মতে, "এমনিতে বৃষ্টিবহুল আমাজন অরণ্যের আবহাওয়া স্যাঁতস্যাঁতে এবং ভেজা। কিন্তু গবাদি পশুর চারণভূমি হিসেবে জমিকে ব্যবহার করতে কৃষকরা শুকনো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। এই সময় বন জঙ্গল দাহ্য হয়ে ওঠে এবং খুব সহজেই তাতে আগুন লাগা সম্ভব। দক্ষিণ আমেরিকায় কর্মরত বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো নিরলস পরিশ্রম করে স্থানীয় মানুষকে আগুন ব্যবহার নিষেধ করতে বদ্ধ পরিকর।"
'আমাজন এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট' এবং ব্রাজিলের 'ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ একার' তাদের নতুন গবেষণায় আমাজনের দাবানলের ঘটনার সঙ্গে বনাঞ্চল ধ্বংস করার কোন প্রচ্ছন্ন সরকারি সমর্থনকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এই দাবি যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলে খরার প্রকোপ থেকে আগুন সৃষ্টি হয়েছে এই সরকারি তত্ত্বটি ভুল প্রমাণিত হবে। কারণ খরা থেকে দাবানল ঘটবার সম্ভাবনা এবং উদাহরণ সমগ্র বিশ্বে বিরল। গবেষণায় আরো বলা হয়েছে -- " যে দশটি মিউনিসিপ্যালিটি তে সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা, কাকতালীয়ভাবে সেখানেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। ২০১৮ সালের দাবানলের ৩৭ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের দাবানলের ৪৩ শতাংশ ঘটনা এইসব এলাকা থেকেই উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। অর্থাৎ নতুন করে বৃক্ষহীন হওয়া এবং খরায় ভুগতে থাকা এলাকায় দাবানলের শ্রীবৃদ্ধি আগুনের একটি চরিত্রকে ইঙ্গিত করে, সেটি হল কোনো এলাকা নতুন করে বৃক্ষহীন হলে ওই এলাকাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা।" এটি মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট।
দাবানলের কারণ ছাড়িয়ে এবার পরিবেশ দূষণের দিকে তাকাই। কাঠ পাতা পুড়লে ধোঁয়া থেকে সচরাচর যে গ্যাস নির্গত হয় সেটি মূলত কার্বন মনোক্সাইড। ২০১০ সালের পর থেকে বাতাসে এই গ্যাসের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে এবং বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ২২৮ মেগাটন। দক্ষিণ আমেরিকা তথা সামগ্রিক বিশ্ব উষ্ণায়নে এই গ্রিন হাউস গ্যাসের ভূমিকা যথেষ্ট। আমাজনের জঙ্গলে যে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির গাছ-গাছালি রয়েছে তারা কার্বন ছাঁকনির মত প্রতিবছর ২.২ মিলিয়ন টন কার্বন শুষে নিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে। তাই সামগ্রিকভাবে জঙ্গল কমে আসা এবং অন্যদিকে গ্রিন হাউস গ্যাস বেড়ে যাওয়ার সমস্যা এই মুহূর্তে মানুষের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
ছবি ৮
পরিবেশের দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বশেষ যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব সেটি হলো মাটির নিচের খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য। ৫৬ মিলিয়ন বছরের পুরনো এই জঙ্গলের নিচে লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার খনিজ সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার। অনেকদিন ধরেই আমাজনের উপর বহুজাতিক তেল সংস্থাগুলির কুনজর। বলা হচ্ছে আমাজনের নিচে খনিজ সম্পদের ভান্ডার উত্তোলন করতে পারলেই ব্রাজিল সহ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অভাব দূর হয়ে যাবে। ইউরোপ আমেরিকার মতো সবকিছু হয়ে উঠবে ঝাঁচকচকে। মাটির নিচে কয়লা, পেট্রোলিয়াম, আকরিক লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, বক্সাইট ইত্যাদি নানান বহুমূল্য সম্পদ উত্তোলনের জন্য লাগাতার খনন কাজ চলছে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে। দেশীয় এবং বিদেশি বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে খনিজ সম্পদের এই লালসা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। আমাজনে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ এবং অরণ্য ধ্বংসের জন্য অর্থ যোগান দুটোই আসে উন্নত বিশ্ব থেকে। এর পেছনে আছে আন্তর্জাতিক ক্ষমতায়নের গভীর রাজনীতি।
মনে প্রশ্ন জাগে, ঔপনিবেশিক আমলে ইউরোপীয়দের লোভ লালসা যেভাবে জঙ্গল এবং হ্রদের জল তোলপাড় করে এল ডোরাডোর সোনার সন্ধানে নেমে পড়েছিল, বহু বছর পেরিয়ে, আজকের নব্য ঔপনিবেশিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বায়নের যুগে আমাজনের জঙ্গল ধ্বংস করে মাটির নিচের খনিজ সম্পদ সংগ্রহের যে গোপন ষড়যন্ত্র, বিষয় দুটি কি কোন অংশে বর্বরতায় একে অপরের থেকে কম ? একের পর এক বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতারা কি তবে শুধুই মুখোশ পাল্টেছে আর খোলস ছেড়েছে ? আমাজন দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে কিন্তু বসুন্ধরা মায়ের এই দুর্ভোগ একই তিমিরে।
ছবি ৯
বাইবেল বিফ এবং বুলেট
আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার ঘোষণা করেছিলেন ডেনমার্কের থেকে গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটি কিনে নিয়ে সেখানে 'ট্রাম্প টাওয়ার' বানাবেন। আমাজনের আগুন তখনও জ্বলছে, এরই মধ্যে এমন তুঘলকি খেয়াল শুনে পৃথিবীর তাবড় রাষ্ট্রনেতারা থরহরি কম্পমান। বিষয়টি উত্থাপন প্রাসঙ্গিক এই কারণে, যে আমাজনের দাবানল একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডাতে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন আর প্রকৃতির নিজস্ব এক্তিয়ার নয়। বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষমতায়নের রাজনীতি। অ্যানাকন্ডা অথবা মেরু ভালুকরা চাইলেই আমাজন অথবা গ্রীনল্যান্ড সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে না। আধুনিক পৃথিবীতে এটাই রাজনৈতিক দস্তুর।
আমাজনের আগুন নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর প্রায় সব মহলেই। এই আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়াকে ব্রাজিল সরকারের গাফিলতি হিসেবে দেখছেন বিশ্ব নেতারা। সুযোগ বুঝে বিরোধীরা নেমে পড়লেন ঘোলা জলে মাছ ধরতে। ব্রাজিলের তদানীন্তন দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রপতি জইর বলসোনারোকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। উত্তরে তিনি বলেন -- "ম্যাক্রো রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মহাকাশ গবেষণা সংস্থার উপগ্রহ চিত্রে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মিডিয়া হাউসগুলো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এই ঘটনাকে কাজে লাগাচ্ছে। এসবের পিছনে অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। মিডিয়া কি চায় বাকিদের মত ব্রাজিলও শেষ হয়ে যাক ? আগুন লাগানো অপরাধ। একে আটকাতে সরকার বদ্ধপরিকর। আগুন নেভাতে ব্রাজিলের ৪৪ হাজার সেনা নিজের কাজ করছে। দরকারে ব্যবহার করা হবে যুদ্ধবিমান।" তিনি আরো বলেন -- "ক্যালিফোর্নিয়ার জঙ্গলে আগুন জ্বললে সেটি ঠিক কিন্তু আমাজনে আগুন লাগলে সবার এত মাথাব্যথা কেন ? জঙ্গলে আগুন লাগা কি স্বাভাবিক নয় ? ব্রাজিলের কৃষক কাঠুরেরা জীবিকার প্রয়োজনে জঙ্গলে ছোটখাটো আগুন লাগান সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জি-৭ সম্মেলনে ব্রাজিল অংশগ্রহণ না করায় সেখানে এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে আলোচনা ভুল স্থানে উপনিবেশবাদী মানসিকতা ফুটে উঠেছে।"
রাজনৈতিক চাপান উতোরে পাল্টা জবাবে বিরোধীরা বলসোনারো সরকারের পরিবেশ নীতি কে দায়ী করেন। তাদের দাবি -- অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য সরকার চোরা শিকারিদের উৎসাহিত করছে। তার মদতেই কাঠ মাফিয়া এবং প্রোমোটাররা আমাজনের জঙ্গল সাফ করে নগরায়নের পথে হাঁটার সাহস পাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের কারখানা স্থাপনের জন্য যথেচ্ছভাবে জঙ্গলের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বেআইনি জমিনীতিতে বন ধ্বংসকারীদের শাস্তি বিধান অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। আগুন লাগানোর ঘটনা এমন ভাবে পরিবেশিত হয়েছে যার ফলস্বরূপ কারোর কোন শাস্তি হবে না। অন্যদিকে এলাকা পরিষ্কার, দখলদারি এবং মালিকানা পরিবর্তন ইস্যুতে অন্তর্কলহ বাঁধছে। যার প্রতিফলন হিসেবে চিরসবুজ অরণ্য আজ অগ্নিগর্ভ। আগুন লাগানোর জন্য আদিবাসী এবং এনজিওদের দায়ী করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় গুরুত্ব না দিয়ে বন জঙ্গল পরিবেশ নিয়ে জটিল রাজনীতি হচ্ছে। উন্নয়নের এই রাজনীতির শিকার হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি কখনোই দুর্বিপাক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। আজীবন শোষিতই থেকে যাবে।
অকস্মাৎ এমন রাজনৈতিক পালাবদলে ব্রাজিল সরকার ঘরে বাইরে কোনঠাসা। আমাজনের আগুন ইস্যুতে দেশের অভ্যন্তরে ভোট রাজনীতি টালমাটাল। লুলার নেতৃত্বে বিরোধী সুর প্রশস্ত। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রান্স জার্মানি আয়ারল্যান্ড সহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একাধিক দেশ কার্যত ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুশিয়ারি দিয়েছে। ফিনল্যান্ড বন্ধ করেছে ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি। ব্রাজিলের বন সংরক্ষণের জন্য প্রকল্পের তহবিল স্থগিত করেছে জার্মানি। দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট 'মার্কোসার'-এর সদস্য ব্রাজিল আর্জেন্টিনা প্যারাগুয়ে এবং উরুগুয়ে। দীর্ঘ ২০ বছর আলোচনার পর মার্কোসার-এর সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশন চুক্তি অনুমোদনে রাজি হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাজনের আগুন নেভাতে ব্রাজিল কার্যকরী উদ্যোগ না নিলে চুক্তি স্থগিত রাখার কথা হয়তো ভাবা হবে। অন্যদিকে, জাতিসংঘ বিবৃতি দিয়ে দাবানলের এই ঘটনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক আখ্যা দিয়েছে। ঘটনার জের হিসেবে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘ জারি রেখেছে লাগাতার অর্থনৈতিক অবরোধ। বিরোধিতার পরিসর থাকলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বহু দেশ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আগুন নেভাতে জি-৭ জোটের পক্ষ থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ ডলার অর্থ এবং সামরিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে কানাডা জার্মানি ইতালি জাপান ব্রিটেন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা।

ছবি ১০: ব্রাজিলের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলসোনেরো। সূত্র: ইন্টারনেট
২০২৩ সালে অবশ্যম্ভাবী সেই পালাবদল ঘটলো ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসে। দক্ষিণপন্থী বলসোনারোকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরলেন বামপন্থী নেতা লুলা দা সিলভা। দীর্ঘ প্রায় দু'বছর মিথ্যে অভিযোগে জেলবন্দি থাকা লুলা ফিরে এলেন উল্কার মত। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠালেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন প্রমুখ বিশ্বনেতা। মূলত আমাজন ইস্যুতে ভর করে লুলা ক্ষমতায় ফিরলেও সমস্যা অনেক তাই চ্যালেঞ্জ বহুমুখী। চরম কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে একটি টুইটবার্তায় লুলা ঘোষণা করলেন -- "২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলে। ১৮ই মে ২০২৩ সালে এই সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আমাজনিয়ান শহর 'বেলেম ডো প্যারা'কে সম্মেলনের জন্য নির্বাচন করেছে জাতিসংঘ। পুরো দেশের জন্য এটি একটি বিশাল সুযোগ। আমি মিশর প্যারিস ও কোপেনহাগেনে আয়োজিত কপ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছি। সেখানে সবাই আমাজনের কথা বলেন। আমি আমাজনের জঙ্গল ধ্বংস প্রতিরোধ ও ক্ষতিপূরণের প্রতিজ্ঞা নিয়েছি। এখানে কপ সম্মেলন হলে সবাই আমাজন সম্পর্কে জানতে পারবে। দেখতে পারবে আমাজন নদী, জঙ্গল এবং প্রাণিসম্পদ।"

ছবি ১১: ব্রাজিলের বর্তমান রাষ্ট্রপতি লুলা ডিসিলভা । সূত্র: ইন্টারনেট
এবার কি তাহলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃষ্টি অরণ্যের দেশ ব্রাজিলে সুদিন ফিরবে ? কার্বন ছাঁকনি হিসেবে পরিচিত আমাজনের জঙ্গল কি এই ঘটনার পর তার কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে পারবে ?
*বিভাগীয় সহকারী অধ্যাপক
খুব সুন্দর লেখা। পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো 😊
উত্তরমুছুনSudeshna Sanyal: লেখাটা খুব ভালো লাগলো। বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নীতি কিভাবে rainforest এর ওপর প্রভাব ফেলছে তা সুন্দরভাবে তুলনা করা হয়েছে।
উত্তরমুছুন