লকডাউনে আমার গ্রাম
আমার
গ্রামটি দক্ষিণ
24 পরগনা
জেলার
সুন্দরবন অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম বৈকুণ্ঠপুর। এই
গ্রামই
আমার
জন্মস্থান। আমার
গ্রামের বর্ণনা
অনেকটাই জীবনানন্দ দাশের
" বাংলার
মুখ
আমি
দেখিয়াছি" কবিতাটির
আলোকে
গাঁথা।
শস্য
শ্যামলে ভরপুর,
গ্রামের চারিদিকে সবুজের
মেলা,
সকালের
পাখির
ডাক,
বিকালের গোধূলি,
সন্ধ্যায় শাঁক-কাঁসর-ঘন্টার ধ্বনি,
ঝিঁঝিঁ
পোকার
ডাক,
লোডশেডিং সব
মিলিয়ে
এক
শান্তির জায়গা
আমার
এই
গ্রাম।
"আমাদের ছোট গায়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি
সেথা
সবে
মিলে
নাহি
কেউ
পর।
পাড়ার
সকল
ছেলে
মোরা
ভাই
ভাই
এক
সাথে
খেলি
আর
পাঠশালে যাই
।"
আর সেই গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় চলে আসি, পড়াশোনা সূত্রে আজ 12 টা বছর গ্রামের বাইরে থাকলেও, এই জন্মস্থানের প্রতি এক নিবিড় ভালোবাসা ও টান অনুভব করি। তাই স্বল্প সময়ের জন্য ছুটি পেলে গ্রামের বাড়ি রওনা দিতে একদম দেরি করি না। যদিও তা বেশি দিন থাকা সম্ভব হয় না।
বর্তমান পরিস্থিতি তে সারাবিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব জনজীবনকে একপ্রকার স্তব্ধ করে দিয়েছে । করোনা মহামারীর মারণ থাবা থেকে মুক্ত রাখতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, অনির্দিষ্টকালের কালের জন্য ছুটি ঘোষণা হয় এবং আমিও গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। আজ প্রায় ছয় মাস হল আমি গ্রামে ফিরেছি।
![]() |
| নির্মল প্রকৃতি |
![]() |
| গ্রামের রাস্তা |
গ্রাম্য জীবনের অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি সামাজিক জীবনধারার একটু অন্য রূপ দেখা যায় । করোনা ভাইরাসের প্রকোপকে স্তিমিত করতে তথা লকডাউনকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিভিন্ন প্রকার বিধি নিষেধ জারি হয়, যথা - প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া, বাড়ির বাইরে বার হলে অবশ্যই মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদি। এই সকল নিয়ম বিধিগুলির সাথে পরিচয় ঘটাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পুলিশ প্রশাসন থেকে মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। লকডাউনের প্রথম দিকে এই সকল বিষয়গুলিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ছিল চোখে পড়ার মত। তৃতীয় ও চতুর্থ দফার পর থেকে এক প্রকার নিয়ম ভঙ্গের পরিস্থিতি যেমন হাটে বা মোড়ে মানুষের জমায়েত। এই জমায়েতে মূল চর্চার বিষয় হয় দেশ-বিদেশে খবর, যে গুলো লোক মুখে প্রচার-প্রসারের সাথে পরিবর্তিত হতে হতে গুজবে পরিণত হয় যেমন- 'ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা ইতালি থেকে ভালো তাই এইখানের ডক্টর,নার্সদের কে ওই দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে', 'সব মানুষ মারা যাবে', 'করোনা ভাইরাসের টিকা বাজারে চলে এসেছে' (জুন মাসের আগে) ইত্যাদির ইত্যাদি। গ্রামের মানুষ গুলির মধ্যে ভয় থাকলে ও সচেতনতার বিশেষ অভাব দেখা গেছে যেমন জীবাণু মুক্ত না করে একই মাস্ক পরে পনেরোদিনে র বেশি কাটিয়েছেন, এই প্রকার নিদর্শনও প্রচুর।
করোনা ভাইরাসের সময় কালে কর্মহীনতা তথা প্রবল অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দরুন প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকদের আগমন ঘটে ভিন রাজ্য থেকে যেমন মহারাষ্ট্র, কেরালা, গুজরাত, দিল্লি, আন্দামান ও নিকোবর ইত্যাদি। এই সকল শ্রমিকদের প্রশাসনিক দপ্তরের সহায়তায় আইসোলেশন সেন্টার বানানো হয় কাঁটামারী চূড়ামনি হাই স্কুলকে, যা আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় সতেরো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই সকল শ্রমিকদের দেখাশোনা ও তদারকির ভার দেয়া হয় মৈপীঠ কোস্টাল থানার উপর এবং যথাযথ নিয়ম বিধি পালন করে সুস্থতার সাথে প্রায় সকল শ্রমিকগণ নিজ নিজ গ্রামে ফেরেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনা
ভাইরাসের মারণ
প্রকোপের মধ্যে
সুপার
সাইক্লোন আমফান
এর
আবির্ভাব ও
দক্ষিণবঙ্গ উপকূলীয় সংলগ্ন
এলাকায়
আছড়ে
পড়া
তথা
প্রবল
ক্ষয়
ক্ষতির
সাক্ষ্য বহন
করে।
এই
দুর্যোগ ভরা
দিনটিতে
বহু
মানুষ
ক্ষয়ক্ষতি র
আশঙ্কায় নিজ
বাড়ি
ছেড়ে
পরিবারসহ নিকটবর্তী প্রাথমিক স্কুল
গুলিতে
আশ্রয়
নেয়
এবং
মানুষের বাঁচা-মারা প্রশ্নের কাছে
সামাজিক দূরত্ব
বজায়
রাখা
বিষয়টি
বিশেষ
ভাবে
উপেক্ষিত হয়।
মোটের
উপর
এই
বিপর্যয় এর
ভয়াবহতা কাটিয়ে
উঠতে,
নিজেদেরকে সবল
করতে
কিছুটা
সময়
চলে
যায়।
যদিও
আমাদের
এলাকায়
কোন
প্রকার
ত্রান
সামগ্রী এসে
পৌঁছায়নি।
করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সাধারণ মানুষদের বাঁচার রসদ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হয়। এই তালিকায় ছিল মাথা পিছু পাঁচ কেজি চাল, পাঁচশ গ্রাম মুসুর ডাল বা ছোলা প্রভৃতি এই প্রকার পরিস্থিতিতে যেটা বেশির ভাগ পরিবারের কাছে খুশির বৃষ্টির মতো। কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা প্রকল্পের আওতাধীন পরিবার গুলিকে তিন মাস বিনা পয়সায় তিনটি LPG সিলিন্ডার প্রদান এবং প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পের আওতায় মহিলাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ মাসিক পাঁচশ টাকা করে দেওয়া হয়, যা এই প্রকার কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্তিতিতে বহু খেটে খাওয়া মানুষ বা পরিবারের কাছে এক নতুন আশার সঞ্চার ঘটায়। বেসরকারি ক্ষেত্রে (যেমন বৈকুঠপুর তরুণ সংঘ) ও বিভিন্ন ব্যক্তিদের যুগ্ম প্রয়াসের মাধ্যমে চাল, ডাল, আটা, বিস্কুট প্যাকেট, তেল, মশারি, সাবান প্রভৃতি দান করা হয়, যা থেকে বহু পরিবার উপকৃত হয়।
সবশেষে, বর্তমানে আনলক পর্বে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিন বা ক্ষেত্র বিশেষে লকডাউন চলছে এবং বিগত ছয় মাসের জীবনযাত্রা প্রনালীটিতে একপ্রকার অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আশা করা যায় এই ঘরবন্দি পরিস্থিতির অবসান হবে এবং এক নতুন রোগ মুক্ত দিনের সূর্য্যদয় আমাদের কাছে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। সকল মানুষ আবার পূর্ণ উৎসাহের সাথে সেই পূর্ব পরিচিত কর্মব্যস্ততাতে নিজেদেরকে পুনরায় সমর্পণ করবে।


Koto kichhu jante parlam! Pandemic e gram shomporke eto information peye khub bhalo laglo. -- Sudeshna Sanyal
উত্তরমুছুনDhan chashi der storage er abhab -- ei samasya kibhabe solve kora holo?
Sei UUMPUUN er samay thekei aamader sakoler chokh tomar poristhiti r dikey chhilo..taar uttar kichhuta pelam..e abhiggota shahor er manush er noy ..ekhon ta theke kichhuta mukto hoyechho thik i tobey eta aamader bhobishyot er nana kothin poristhiti mokabila korar anek bhabna diye gechhe..
উত্তরমুছুনBhalo lekha ..chhobi gulo khub sundar..bhalo theko..
ধন্যবাদ ma'am,আপনার আছেন বলেই তো
উত্তরমুছুনজীবনের এতটা পথ অতিক্রম করতে পারলাম, ভালো থাকবেন আপনি ও।