পান্না সবুজ প্রবাল দ্বীপ


২০/১০/২০১৯


ভারতী দাস*


২০১৭ সালের ৭ই জানুয়ারি দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে আরব সাগরের রানী কোচিতে পৌঁছে গেলাম। এখানে এসেছি এবার দীর্ঘ স্বপ্ন লালিত লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের অভিপ্রায়ে। লাক্ষাদ্বীপ ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। আয়তন মাত্র ৩২ বর্গ কিমি। রাজধানী কাভারাত্তি। মত ৩৬ টি ছোট বড় দ্বীপের সমষ্টি। তারমধ্যে মাত্র ১০ টি দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠেছে। সেই দ্বীপগুলো হল কাভারাত্তি, কালপেনি, মিনিকয়, আগাত্তি, কদমদ, বাঙ্গারাম, শেটল্যাট, অ্যানদ্রোত, আমিনি এবং কিলতান। এর মধ্যে পর্যটকেরা প্রথম ছয়টি দ্বীপে যেতে পারে। কোচি এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে কাভারাত্তি যাবার জাহাজ ছাড়ে। বিমান যায় কোচি, ব্যাঙ্গালোর এবং চেন্নাই থেকে। জুন থেকে অক্টোবর বর্ষা ঋতুর জন্য সমুদ্র উত্তাল থাকে। সেই সময় লাক্ষাদ্বীপ না যাওয়াই ভালো। বছরের বাকি সময়টা জাহাজে লাক্ষাদ্বীপ যাবার জন্য উপযুক্ত সময়। আমরাও কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপ যাবো বলে ‘লাক্ষাদ্বীপ স্পোর্টস ভ্রমণ সংস্থা’র ‘সমুদ্রম’ প্যাকেজ ট্যুর বুক করেছি। সারারাত উত্তেজনায় ঘুম হয়নি। জাহাজে চড়ার স্বপ্ন আমার বহুদিনের। সেই কোন কিশোরী বেলায় অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’ পড়ে আরব সাগরে জাহাজ যাত্রার ইচ্ছে মনের একান্তে রঙিন হয়ে ছিল। সেই ইচ্ছে পূরণের স্বপ্ন নিয়ে ৮ই জানুয়ারি ভোরের সূর্য দেখা দিল। তারপর চটপট স্নান সেরে, প্রাতঃরাশ করে তৈরি হয়ে নিলাম। জাহাজে মালপত্রের ওজন নির্দিষ্ট। ফলে দীর্ঘদিনের জন্য বেড়ানোর প্রচুর মালপত্র হোটেলেই রেখে অল্প স্বল্প জামাকাপড় ও প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কোচি বন্দরের উদ্দেশ্যে।
সকাল ৯ টায় আমাদের বন্দরে report করার কথা। কিন্তু কোচি বন্দর এত বিশাল আর এতগুলো জেটি যে আমরা লাট্টুর মত ঘুরপাক খেতে শুরু করলাম। “হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা”। অবশেষে তিনটি জেটি ঘুরে FCI  জেটিতে কোনমতে সাড়ে নয়টায় হাজির হলাম। ওখানে নানান নিয়ম কানুন সেরে সাথে থাকা মালপত্র পরীক্ষা করিয়ে জাহাজঘাটা থেকে দেওয়া পরিচয়পত্র এবং হাতে নানান কাগজপত্র ঠাসা ব্যাগ ঝুলিয়ে বাসে উঠলাম। বাস আমাদের নিয়ে পৌঁছালো অয়েল ট্যাঙ্ক জেটিতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম লাক্ষাদ্বীপগামী জাহাজ ‘M V KAVARATTI’ যাত্রীদের স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ।
আমাদের জাহাজ
চোখ পুরো ছানাবড়া হয়ে গেল। মনের অবস্থা “হৃদয় আমার নাচিরে আজিকে”। পায়ের ব্যথা, বয়সের কথা ভুলে জাহাজের সিঁড়ি দিয়ে প্রায় দৌড়ে উঠে পড়লাম। এই প্রথম বড় জাহাজে উঠলাম। খুশীর সীমা নেই। জাহাজের ভিতরে ঢুকে দ্বিতীয় দফার সিঁড়ি ভাঙ্গা শুরু হলো। তৃতীয় ডেক, চতুর্থ ডেক ভেঙ্গে অবশেষে পঞ্চম ডেক। এখানেই আমাদের ছোট্ট কেবিন। প্রথম শ্রেনীর কেবিনে দুজন করে থাকার ব্যবস্থা। জিনিসপত্র কেবিনে ফেলেই দে ছুট ওপরের খোলা ডেকের দিকে। এটাই সর্বোচ্চ ডেক। সামনে আরব সাগরের বিস্তৃত জলরাশি। পিছনে কর্মব্যস্ত কোচি বন্দর। দেখতে দেখতে দুপুর বারোটা বাজল। চারিদিকে চাইনিজ ফিশিং নেট দিয়ে জেলেরা মাছ ধরছে। কর্মব্যস্ত বন্দরের জলছবি দেখতে দেখতে বেলা ১টা বেজে গেল। এইবার ডেকে ঘোষণা হল মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য। খাবার ঘরে গিয়ে চিকেন বিরিয়ানি আর ডিমের কারি দিয়ে ভোজ সেরে জাহাজের অন্দরমহল দেখতে বেরোলাম। পাঁচতলা থেকে একতলা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম। অন্তর্বিভাগ বহির্বিভাগসহ হাসপাতাল, বিভিন্ন ধর্মের উপাসনার জন্য ঘর, অডিটোরিয়াম, কিওস্ক দেখে আবার পাঁচতলার সর্বোচ্চ ডেকে চলে এলাম। ঠিক তিনটে দশ মিনিটে জাহাজ ছেড়ে দিল ৪০৪ কিমি দূরের কাভারাত্তির উদ্দেশ্যে। আসতে আসতে কোচি বন্দর তার প্রাণচাঞ্চল্য এবং রঙিন দৃশ্যপট নিয়ে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমরা এবার অকূল সমুদ্রে। চারধারে অনন্ত জলরাশি। দিগন্তে আকাশ এসে সমুদ্রে মিশে গেছে। সমস্ত পর্যটকেরা বিভিন্ন তলার ডেকে হাজির। প্রায় ৯০ শতাংশ বাঙালি। পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে দূরে আছি বলে মনেই হচ্ছে না। আসতে আসতে দিনমণি তার রক্তলাল ছটা ছড়িয়ে সাগর বক্ষে আশ্রয় নিল।
ঝলমলে জ্যোৎস্না রাত
আকাশে অজস্র তারা এবং নীচে নিকষ কালো সমুদ্র। জাহাজের গতিবেগ বেশী। সকালে কাভারাত্তি পৌঁছবে। ডেকে প্রচন্ড হাওয়া। রেলিং শক্ত করে ধরে দাঁড়াতে হচ্ছে। রাত্রি ৮ টার সময় পুনরায় ঘোষণা করা হল নৈশ আহারের জন্য। নৈশ আহার শেষে রাতের বিশ্রাম।  
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই আবার ডেকে দৌড়লাম। সূর্যোদয় দেখব বলে। ডেকে অনেকে আগেই চলে এসেছেন। সুয্যিমামা মুখ দেখাবার জন্য প্রস্তুত। সমুদ্র আকাশে রক্তিমা ছড়িয়ে পড়েছে। আর দূরে ছায়া ছায়া তীরভূমি। এরই মধ্যে সূর্য দ্বীপের ওপর উঠে পড়ল এবং এইবার দ্বীপ ভালো করে দেখা যাচ্ছে। দ্বীপের রঙ পান্না সবুজ, জলের রঙ সমুদ্র সবুজ। কাভারাত্তি এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত সম্পূর্ণ দ্বীপটাই দেখা যাচ্ছে। ছোট্ট দ্বীপ, একটু পরে জাহাজ নোঙর করল- সামনে জাহাজ যাবার মত গভীরতা নেই; লাক্ষাদ্বীপের দ্বীপগুলো লেগুনের মধ্যে অবস্থিত। এখান থেকে দ্বীপ অবধি ছোট দ্রুতগামী নৌকোয় যেতে হবে। জাহাজের নিয়ম অনুযায়ী আগে স্থানীয় অধিবাসীরা নামবে, তারপর পর্যটকদের নামার পালা। নামার আগে চা, ধোসা, ডিমের ভুজিয়া দিয়ে প্রাতঃরাশ সেরে লাইফ জ্যাকেট পরে প্রথম ডেকে নেমে এলাম। ওখানে জাহাজের দরজা খুলে স্পিডবোটে উঠে পড়লাম। বেশ ভয় ছিল এই ওঠা নামার পর্ব নিয়ে; তীরভূমি থেকে বহুদূরে মাঝ সমুদ্রে জাহাজ থেকে টলমল করা নৌকোয় ওঠা বেশ বিপজ্জনক। বাস্তবে কোন আসুবিধাই হয়নি। পাঁচ মিনিট যাবার পরই কাভারাত্তি ঘোমটার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো।
কাভারাত্তি দ্বীপ
এবার পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে পান্না সবুজ দ্বীপ। তার থেকেও পরিষ্কার সমুদ্রের তলদেশ। কাঁচের মত স্বচ্ছ জলের মধ্যে দিয়ে এবারে নীচ অবধি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কতরকম সবুজ, নীল, ফিরোজা, আকাশী নানান বিচিত্র রঙে প্রকৃতি ঝলমল করছে। মিনিট ১৫ বাদে নৌকো নোঙর করলো, আমরাও মাটিতে পা রাখলাম। সোজা চললাম সমুদ্র সৈকতে। সেখানে নানাবিধ চেয়ারে বসার ব্যবস্থা। বসার পর স্বাগত পানীয় চলে এলো- কচি ডাব। সমস্ত দ্বীপ নারকেল বীথিকায় সজ্জিত। এরপর কাঁচের তলদেশ বিশিষ্ট নৌকোয় কোরাল দেখতে বেড়িয়ে পড়লাম। প্রচুর রঙবেরঙের ছোট মাছ কোরালের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তবে এখানে কোরালের রঙের বৈচিত্র্য কম। নানান আকারের কোরাল দেখে সৈকতে ফেরা। সৈকত বালির পরিবর্তে সাদা মিহি পাউডারের মত কোরাল গুঁড়ো দিয়ে তৈরি। কোরাল দেখে এসে সবাই হৈ হৈ করে জলে নেমে পড়ল।
সমস্ত দ্বীপ নারকেল বীথিকায় সজ্জিত
কাঁচের মত স্বচ্ছ জলের মধ্যে দিয়ে এবারে নীচ অবধি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে
যেহেতু লেগুন, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ এখানে অনুপস্থিত। নানান জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুবা ডাইভিং এই আগ্রহ সব চেয়ে বেশি। কায়াকিং, বোটিং, সাঁতার বিনা বাঁধায় করা যাচ্ছে। এমনকি ছোট বাচ্চারাও সবাই একা একা খেলছে। সূর্য যখন মধ্য গগনে তখন জল ছেড়ে সবাই একে একে উঠে পড়েছে। এবারে মধ্যাহ্ন ভোজের ঘোষণা- ভাত, রুটি, চিকেন, ছোলার তরকারি, টুনা মাছ, পাঁপড় ভাজা, মিষ্টি দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে কাভারাত্তি পরিদর্শনে বেরলাম। প্রথমে মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম – নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ রয়েছে, শার্ক থেকে ইল পর্যন্ত। শার্কপুলে দুটো বেবি শার্ক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরপর গেলাম মিউজিয়াম দেখতে। সেখানে ১৯৮৮ সালের ২০শে এপ্রিল ১০ মিটার লম্বা হাঙর ধরা পড়েছিল, ওজন ৮ টন। তার কঙ্কাল রাখা আছে। ছোট্ট দ্বীপ, আয়তন মাত্র ৩.৯৩ বর্গ কিমি। ১০ মিনিটে দ্বীপের এপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ঘোরা হয়ে যায়। সুন্দর মসৃণ পিচের একটাই রাস্তা গোটা দ্বীপটাকে ঘিরে রেখেছে। কয়েকটা সরকারী কার্যালয় ছাড়া আর পাকা বাড়ি নেই। প্রচুর নারকেল গাছ। ৯৭% ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। ছেলেমেয়েরা সবাই স্কুলে যাচ্ছে। মালয়ালাম ভাষা প্রচলিত। বিকেলে স্থানীয় অধিবাসীদের লোকনৃত্য দেখে এবার জাহাজে ফেরার পালা। সূর্য্যও পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পড়েছে। কাভারাত্তিকে বিদায় জানিয়ে নৌকায় উঠলাম জাহাজে ফেরার জন্য। গতকালের মতই আরবসাগরে স্নান করতে নেমে পড়লেন সূয্যিমামা। দূরে কাভারাত্তিতে আলো জ্বলে উঠল। রাতে জাহাজের কর্মীরা বঁড়শি দিয়ে বিশাল বিশাল টুনা মাছ ধরল। দ্বিতীয় ডেক টুনা মাছের রক্তে লালে লাল। কাল ভোরে কালপেনি পৌঁছব। 
কালপেনি দ্বীপ 
ভোরে কাল স্নান করতে নামা সূর্য আবার টুক করে স্নান সেরে উঠে পড়ল। দূরে কালপেনি দেখা যাচ্ছে। জাহাজ নোঙর করেছে। প্রাতঃরাশ সেরে গতকালের মতোই লাইফ জ্যাকেট পড়ে নৌকো করে দ্বীপে পৌঁছে গেলাম। পৌঁছে পুরো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম সমুদ্রের রঙ দেখে। সবুজ, পান্না সবুজ (সমুদ্র সবুজ), নীল, আকাশী, ফিরোজা- একেক জায়গায় একেক রঙ। এতরকমের সমুদ্রের রঙ আগে কখনো দেখিনি। ছোট্ট দুটো দ্বীপ তিলাক্কাম এবং পিট্টি দেখা যাচ্ছে। উত্তর দিকে চেরিয়াম বলে জনশূণ্য আরেকটি দ্বীপও আছে। দ্বীপ ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম। লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র শিল্প এই দ্বীপে অবস্থিত। গেঞ্জি তৈরি হয়। তাছাড়া নারকেল তেল এবং মতস্যজাত দ্রব্য তৈরি হয় এই দ্বীপে। ছোট্ট দ্বীপ, আয়তন মাত্র ২.৪৮৫ বর্গ কিমি। অর্ধেক করা নারকেল মালা মশারির মধ্যে শুকাচ্ছে।
কালপেনি দ্বীপ 
কালপেনিতে রঙের বাহার 
এক ঘন্টার মধ্যে ঘুরে সমুদ্রের ধারে চলে এলাম। সেখানে গতকালের মতই বিভিন্ন জলক্রীড়ার ব্যবস্থা। নৌকো করে আবার সামনের ছোট ছোট দ্বীপে যাওয়া হোল। সেখানে প্রচুর কোরাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সারাদিন সমুদ্রের সাথে মিতালী। স্থানীয় অধিবাসীদের লোকনৃত্য এখানেও হোল। জাহাজে ফেরার সময় আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। সমুদ্র উত্তাল, নৌকো মোচার খোলার মত দুলছে। যে যার সন্তানদের সামলে নৌকোর মধ্যে নিয়ে আসছে। ঈশ্বরের নাম জপতে লাগলাম। অবশেষে জাহাজে উঠে শান্তি। আজ আর সূর্যাস্ত দেখা গেল না; সূর্য্যদেব মেঘের আড়ালে চলে গেছেন। রাতে আকাশে বিশাল চাঁদ উঠল। কাল পূর্ণিমা। এবার মিনিকয় যাত্রা।  
আরবসাগরে সূর্যোদয় 
কাল রাতে কখন জাহাজ ছেড়েছে তা বুঝতে পারিনি। ভোরে দূর্দান্ত একটা সূর্যোদয় দেখা গেল। সকাল সাতটা নাগাদ জাহাজ নোঙর করল। এখানে লেগুনের গভীরতা আরও কম। আবছায়া মিনিকয়ের তীরভূমি বহুদূরে দেখা যাচ্ছে। প্রায় ৩০ মিনিটের জলযাত্রা শেষে মিনিকয় দ্বীপে পা রাখলাম। ছবির মত দ্বীপ। দূর থেকেই দ্বীপের সাদা রঙের বাতিঘর চোখে পড়ছিল। প্রথমেই বাতিঘর দর্শনে গেলাম। রীতিমাফিক কচি ডাবের জল দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হল। তারপর বাতিঘরের ২২৫ টা সিঁড়ি ভাঙার বৃথা চেষ্টা করলাম। 
মিনিকয় দ্বীপ 
মিনিকয় দ্বীপ 
দূর থেকেই দ্বীপের সাদা রঙের বাতিঘর চোখে পড়ছিল
এই দ্বীপের নিকটবর্তী দ্বীপ মালদ্বীপ। তাই এখানে মালদ্বীপের প্রভাব বেশী। অধিবাসিদের পরনের পোশাক, ভাষা, সংস্কৃতি সবই মালদ্বীপের মত। মহিলারা সবাই একই ছাপার একই রকম পোশাক পড়েছে। গ্রামের রান্নাবান্না সব এক জায়গায় হয়। সব মহিলারা একসাথে রান্নার ব্যবস্থা করছে। সৈকতে গিয়ে দেখি অসাধারণ দৃশ্য। সমুদ্র স্নান, স্কুবা ডাইভিং, স্মরকেলিং, কায়াকিং, বাইকিং এ সবাই মেতে উঠল। আজ এই যাত্রায় আমাদের শেষ সমুদ্র স্নান। পর্যটকদের মধ্যে আগ্রহ তাই কিঞ্চিত বেশী। মধ্যাহ্ণভোজনের পর দ্বীপ ভ্রমণ। এখানে মূলতঃ গ্রামের কর্মকান্ড দেখাই মূল উদ্দেশ্য। স্থানীয় মহিলারা আমাদের নারকেলের পুর দিয়ে তৈরি পিঠে খেতে দিলেন। এরপর চা খেয়ে জেটিতে। আবার ৩০ মিনিটের জলযাত্রা শেষে জাহাজে ফেরা। শেষ হয়ে গেল এই লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ। এই যাত্রায় আর তিনটি দ্বীপ বাকি থেকে গেল। ‘আবার আসিব ফিরে’ এই শব্দবন্ধটি মনের দুয়ারে মিষ্টি সুরের মত বাজতে লাগল।
একটু পরে আকাশে একই সাথে অস্তগামী রক্তিম সূর্য এবং পূর্ণিমার রূপালী চাঁদের মিতালী দেখলাম। এই সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে সূর্য সমুদ্রে আশ্রয় নিল। শেষদিন বলে অনেক রাত অবধি এদিন ডেকে সবাই নাচে গানে মেতে উঠেছিল। এই কদিনে বিশাল ডেক, প্রবল বাতাস, উত্তাল সমুদ্র  সবার সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। কেবিনে ঢুকে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নিজস্ব এই ছোট্ট কেবিনটা কাল ছেড়ে দিতে হবে। ঈশ্বরের কৃপায় সুন্দর এক সমুদ্রযাত্রা মন ভরিয়ে দিল। ৩৯৮ কিমি দূরে কোচিতে কাল পৌঁছাব।
কাল রাতে ভালো ঘুম হল না। ভোরে সূর্যোদয় দেখে প্রাতঃরাশ  করে ডেকে অপেক্ষা। কোচি বন্দর দেখা গেল; F.C.I. জেটিতে জাহাজ নোঙর করল। শেষবারের মত জাহাজ দেখে নিলাম। তারপর বিদায় জানিয়ে নেমে এলাম। আমার জীবনের অন্যতম সেরা ভ্রমণ সমাপ্ত হল। মনের অ্যালবামে চিররঙীন হয়ে থাকবে এই ভ্রমণযাত্রা।


*প্রাক্তণ ছাত্রী, সাম্মানিক, ১৯৮৭

মন্তব্যসমূহ

  1. অসাধারণ, অচেনা অদেখা লাক্ষা দ্বীপ ঘুরে এলাম কয়েক মিনিটে নিখরচায় ।👌👌😍✍

    উত্তরমুছুন
  2. Lekha r guun e anayashe chamatkar bhramon holo..sanger chhobigulo o atyonto monomugdhokar..

    উত্তরমুছুন
  3. লেখা ও ছবি গুলো পুরোটাই চমৎকার,পড়ে বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করছে। 🌙মামার ছবিটা 👌👌👌

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পায়ে পায়ে প্রাসাদ নগরী...

এঞ্জেলবার্গের তিনটি দিন

সময়