তোমার পায়ের পাতা হিউস্টনে পাতা


২০/১০/২০১৯

জয়া ঘোষ *

তিনি আমাদের একান্ত আপন আমাদের রবীন্দ্রনাথ। তিনি বাঙালির চর্চায় সত্তায়, মননে
বঙ্গ সংস্কৃতির আকাশে তিনি সেই উজ্জ্বল নক্ষত্র যাঁর রবি কিরণে বঙ্গ জীবন সদা উদ্ভাসিত তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি আজও বাঙালির হৃদয়ে  সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।   সে দেশেই হোক বা বিদেশে। কথায় বলে  'ঢেকি স্বর্গে  গিয়েও ধান ভানেআর বাঙালি সে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন রবীন্দ্র চর্চা করবেন না সেটা হতে পারেনা। পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা কিণ্তু এখনও তাঁকে আঁকরে ধরে আছেন।এখনো আমার মনে তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি
রবি ঠাকুরের সাথে বাঙালির প্রাণ বাঁধা আছে  সুরের বাঁধনে।সীমানা ছাড়িয়ে তিনি আমাদের মনে প্রাণে স্বমহিমায় বিরাজমান। এখনও কোন শান্ত সন্ধ্যায় কবি গুরুর গানই গুঞ্জন করে প্রবাসী হৃদয়।বাঙালির মনণ জীবন  জুড়ে আছে যার অপার সৃষ্টি সম্ভার তাকে প্রবাসে এসেও ভুলতে পারেনা বাঙালি।
প্রবাসে সব বাঙালিই রবীন্দ্র চর্চা করেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে শুধু নিজেদের মধ্যে না রেখে দশের  মধ্যে ছড়িয়ে দেবার ইচ্ছে  মনের মধ্যে থাকলেও তাঁকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ভারতবর্ষের বাইরে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ততটা সহজ কাজ নয়।  কিন্তু সেই অসাধ্য সাধনে সক্ষম হয়েছিলেন টেগোর সোসাইটি অফ হিউস্টনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উদ্যোক্তা : রূমা আচার্য দে সরকার  শুরু থেকেই তিনি  হিউস্টনের মত আন্তর্জাতিক শহরের বুকে কবি গুরুর বিশ্ব-শান্তি বিশ্বজনীনতার  ভাবাদর্শকে স্মরনীয় করে রাখবার স্বপ্ন দেখেছিলেন। : দে সরকার একজন বিশিষ্ট ভারতীয় শিল্প-বানিজ্য সংগঠক লোকহিতৈষী কবি অনুরাগী হিউস্টনের বুকে রবীন্দ্রনাথের খুঁটি যাতে পাকা পাকি ভাবে গাঁথা যায় তার জন্যে তিনি বহু দিন ধরে স্থানীয় মার্কিণী অধিকারিকদের দপ্তরে  ঘুরে তাদেরকে গীতাঞ্জলি পড়িয়ে,নানান অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করে কবির লেখার সাথে, তাঁর বিশ্ব মানবতাবাদের সাথে পরিচয় করানোর প্রচেষ্টায় বহু সেমিনার মিটিং করেছেন।
নোবেল জয়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে  তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় নেতৃত্বে আমেরিকায় প্রথম রবীন্দ্রনাথের পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের ব্রোঞ্জের মূর্তি স্তাপন করা হল হিউস্টনেররে মিলারপার্কে  ২০১৩ সালে।
আমেরিকায় প্রথম রবীন্দ্রনাথের পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের ব্রোঞ্জের মূর্তি 

 তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা’ ……মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম এত বড় রবীন্দ্রনাথের মূর্তি শহরের একটি অত্যন্ত জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করতে পারা অত্যন্ত কঠিন কাজ তাঁকে এই বিশাল কর্মকান্ডে সাহায্য করেছেন হিউস্টন পি.এফ.পি টেকনোলজি, কলকাতার টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ, নিহিল আলট্রা কর্প এবং স্থানীয় মার্কিনী ভারতীয়রা।  এই ব্রোঞ্জের মূর্তিটি  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  প্রথম  রবীন্দ্রনাথের পূর্ণ দৌর্ঘ্যের মূর্তি শহরের একটি অত্যন্ত জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এই স্ট্যাচু প্রতিষ্ঠা করার সরকারী ভাবে অনুমতি পাওয়া সহজ কথা নয়
হিউস্টনর "এনার্জি করিডোরশহরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এলাকা।সেখানে অনেক নামী দামী অফিস যেখানে কাজ করেন বহু ভারতীয় অভিবাসী। পার্কের প্রবেশ পথের ডান ধারে,উত্তরপূর্ব কোণে রবীন্দ্র মূর্তিটিকে বসানো হয়েছে। মূর্তিকে ঘিরে লোহার সুন্দর বেড়া। চারদিকে  নানান গাছ গাছালিতে ঘেরা।  মূর্তির সামনে তিনটি ফলকে যথাক্রমে লেখা রয়েছে কবির সংক্ষিপ্ত জীবনী, 'চিত্ত যেথা ভয় শুন্য' কবিতাটি এবং পৃষ্ঠপোষকদের নাম  শিল্পী শ্রী গোপীনাথ রায়ের তত্বাবধানে কলকাতা আর্ট কলেজের দক্ষ ভাস্কর- শ্রীকমল মন্ডল এই মুর্তিটি তৈরী করেছেন। এই গ্লোবাল আইকনকে শ্রদ্ধা  প্রদর্শনের জন্য পার্কের এই বিশেষ অংশটি  সারা বছর ধরে খোলা রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্বে  পার্ক রিক্রিয়েশন দপ্তর
প্রকৃতি প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন পরমেশ্বরকে। প্রকৃতির সহজ সরল সুন্দর পরিমন্ডলে মানুষের মন শুদ্ধ হয় বলে তিনি বিশ্বাস করতেন সেই ভাবনাকে অনুসরণ করে  কবির সঙ্গে মার্কিনিদের আরো বেশি করে পরিচিত করানো এবং তাঁর বিশ্বজনীন আবেদনকে বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দ্যেশেই  টেগোর সোসাইটি সৃষ্টি করেছেন শান্তি প্রেমের  প্রতীক এই রবীন্দ্র কুঞ্জ
কবির লেখা সেই দুটি  লাইন আজ বার বার মনে হচ্ছে  ,’’সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া। দেশে দেশে মোর দেশ আছে, আমি সেই দেশ লব যুঝিয়া। পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই--. তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই, কোথা দিয়া সেথা প্রবেশিতে পাই সন্ধান লব বুঝিয়া।’’
প্রতিবার হিউস্টন সিটি মেয়র রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সরকারিভাবে রবীন্দ্র সপ্তাহ (Tagore week) পালনের নির্দেশ দেন। প্রতিবছরই কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে এখানে প্রাতঃকালিন অনুষ্ঠান হয়। মে মাসের ছয় তারিখ, রবিবার সকাল দশটায়, রবীন্দ্রমূর্তির সামনে বিশ্বকবির জন্মদিন পালিত হয় এবার। সপ্তাহ জুড়ে ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
রবীন্দ্রমূর্তির সামনে বিশ্বকবির জন্মদিন পালিত হয়

আজ মনে পড়ছে সেই দিনটার কথা যেদিন মূর্তি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অনেক লোক সমাগম হয়েছিল  সেদিন সূর্যাস্তের কিছু আগে জনৈকা মার্কিনি ভদ্রমহিলা পার্কে দৌড়তে এসে একবার থমকে দাঁড়িয়েছিলেন  ওই বিশাল ব্রঞ্জের  মূর্তির সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছিলেন ফলকের লেখা কবিতার লাইনগুলি। আলাপ করে জানতে পারলাম রোজকার অভ্যাসবশত বিকেলে  বেড়াতে এসেছেন।চিত্ত যেথা ভয় শুন্যপড়ে বললেন 'amazing!' আমিও তখন মনে মনে আউরে নিলাম, 'আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি, কৌতুহূল ভরি
অপরাহ্নের  আকাশে তখন সূর্যাস্তের রঙ।  আকাশের এক রবি অস্ত গেল পুবের রবিকিরণে উদ্ভাসিত হল পশ্চিমের পৃথিবী


*প্রাক্তণ ছাত্রী, সাম্মানিক, ১৯৮৭

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পায়ে পায়ে প্রাসাদ নগরী...

এঞ্জেলবার্গের তিনটি দিন

সময়