এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন


২০/১০/২০১৯ 

ডঃ জাহ্ণবী মুখার্জী*


আমাদের দেশে এখন বেকারী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ২০১৪ সালে যখন পৃথিবীর গড় শ্রমিক জনসংখ্যার সংযুক্তির হার (Labour Force Participation Rate)ছিল শতকরা ৬৩.৫ ভাগ তখন ভারতের গড় শ্রমিক জনসংখ্যার সংযুক্তির হার ছিল শতকরা ৫৭ ভাগ। এই সঙ্গে আরও একটি খবর হল ২০২৭ সালে আরও দশ কোটি জনসংখ্যা কর্মক্ষম হবে (The Times of India 11th December, 2018 Nagarik Note by PWC World Bank) ২০১১-১২ সালে যুব সংখ্যা প্রতি হাজারে ৪৫০ জন কর্মরত ছিল। প্রতি বছর এই সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরা দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় বা উন্নতিতে কোন অংশগ্রহণ করতে পারছে না। শুধু তাই নয়, উচ্চশিক্ষিতদের চাকুরী পাওয়া যেমন কঠিন, গ্রামের তুলনায় শহরে চাকুরী পাওয়াও তেমনই  কঠিন এবং পুরুষদের থেকে নারী শ্রমিক জনসংখ্যা সংযুক্তির হার অনেক কম।
কিভাবে এই বিপুল সংখ্যার যুবক যুবতীকে কাজে নিয়োগ করা যায় সেই সম্বন্ধে একটা চিন্তা থেকে যায়। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে জনসংখ্যার বেশীরভাগ চাষের উপর নির্ভরশীল। এটা পুরোনো কথা, কিন্তু চাষযোগ্য জমির অভাব, উর্বরতা শক্তির হ্রাস, সেই সঙ্গে বৃষ্টির উপর নির্ভরতা, অতিরিক্ত ফলন সবই বিপরীত প্রভাব বিস্তার করেছে। চাষীর ছেলে চাষ করছে না।
আবার শিল্প কারখানার দিকে যদি দৃষ্টি দেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে বড় বড় শিল্প (Large Scale Industry) তৈরী করা, তার পরিকাঠামো তৈরী করা, তার resource যোগাড় করা সবই কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ, আর করলে কতগুলিই বা করা যাবে, বা কতজনেরই বা কাজ হবে। আবার ছদ্ম বেকারত্বও বেড়ে চলেছে, যেমন চাষ, শিক্ষকতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে, তবে বাড়ি নির্মাণ শিল্পে বা পরিবহন শিল্পে এখনও কিছু কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন Skill Development Programme সাথে Training এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে (যেমন Peerless-R.K.Mission করছ) যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো যায়। কিন্তু সবটাই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কুটির শিল্পের মাধ্যমেও কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এখন বিদেশ গিয়ে চাকরী করার ভাবনা কমিয়ে ফেলাই ভালো। বিদেশের বাজারও ক্রমশঃ সঙ্কুচিত হচ্ছে। তাদের অভিবাসন নীতিরও বিভিন্ন পরিবর্তন হচ্ছে। তাহলে দেশের দিকে মন দিতে হবে।
এখানে একটি সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। এখানে computer এর যুগে দেশের প্রত্যেকটি গ্রাম বা শহর সম্বন্ধে জানা সহজেই সম্ভব। যদি কয়েকটি গ্রামকে বা একটি শহরকে এলাকাতে বিভক্ত করে এলাকাভিত্তিক সমস্যা জেনে যথাযথ planning এর সাহায্যে সেই এলাকার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী উন্নয়ন করা যায় তাহলে কিছুটা সুরাহা হতে পারে। প্রত্যেকটি এলাকা পরস্পর থেকে ভিন্ন, তাদের প্রয়োজনও আলাদা, প্রয়োজন ভিত্তিক কাজের ব্যবস্থা যদি করা যায়, যেমন চাষির ছেলেকে যদি বোঝানো যায় চাষে সফলতা এলে সেও বিপুল সম্ভাবনা হয়ে উঠবে তাহলে কিছুটা সুরাহা করা যায়। অবশ্য চাষযোগ্য জমির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ ফলনের উপযুক্ত দাম, বাজার প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। তার উপর আমাদের বৃষ্টি নির্ভরতা এখনো কমেনি। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনিয়মিত বৃষ্টি প্রবল আকার ধারণ করেছে। সেচের ব্যবস্থা, জলভরো আন্দোলন কিছুই সেভাবে সমস্যা মেটাতে পারছে না। সেই সঙ্গে বিশ্বউষ্ণায়ণের প্রভাব সবকিছুই সমস্যা বাড়িয়ে চলেছে, সেই জন্য আশু সমস্যা জলের ব্যবস্থা করা। এই সবকিছুর সমাধানের জন্য দরকার সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা করা, তার পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা, আর resource অনুযায়ী যথাযথভাবে তার উপযুক্ত প্রয়োগ করা। সেটা যদি গ্রাম বা শহরের এলাকাভিত্তিক হয় তাহলে একেবারে নিম্নস্তর থেকে এলাকার প্রয়োজন বোঝা যাবে। সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা যাবে, এবং তার সমাধান করাও সহজ হয়ে উঠবে। কাজের পরিবেশ ও তৈরী হবে। কাজের ব্যবস্থা করাও সম্ভব হবে। গ্রাম বা শহরে প্রত্যেকের skill ও qualification এবং চাহিদা ও বাজার দেখে তার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে কাজের ব্যবস্থা করা সহজ হবে।
এখন অনেক Skill Development Programme হচ্ছে, অনেক Startup সংস্থা গড়ে উঠেছে সেগুলি যদি এলাকা ভিত্তিক হয় তাহলে সেই এলাকার যুবক যুবতীকে কাজে লাগানো সম্ভব।
এইভাবে যদি প্রত্যেকে তাদের নিজের গ্রাম বা শহরের নিজস্ব এলাকায় primary কাজ পায় তাহলে সমস্যার খানিকটা সমাধান সম্ভব। তারপর গ্রাম ও শহরের দেওয়া নেওয়া চলতে থাকবে। গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজন ভিত্তিক কাজ গড়ে ওঠার পরেও উন্নততর কাজের প্রয়োজন থাকবে এবং সেক্ষেত্রে দেওয়া নেওয়া চলতেই থাকবে। এতে শুধু কাজের ব্যবস্থা নয়, এলাকার অগ্রগতির সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নও সম্ভব হবে। সামাজিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকতে পারবে। ছোটরা পরিবারের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে না। আবার এই যে শিশু জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে, প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যেও একটি ভারসাম্য আসবে। Day Care বা বৃদ্ধাবাসের প্রয়োজন হবে না। 
অনেক ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ বা বিভিন্ন মানসিক অসুখও দেখা দিচ্ছে তারও নিরাময় সম্ভব হবে। শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, এলাকার লোকজনও প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারবে। একটি সহমর্মিতার পরিবেশও তৈরী হবে। অনেক কঠিন সমস্যার সহজ সমাধানও সম্ভব হবে।


*অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও বিভাগীয় প্রধান 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পায়ে পায়ে প্রাসাদ নগরী...

এঞ্জেলবার্গের তিনটি দিন

সময়