২০/১০/২০১৯
অনুষ্মিতা দে ও
অনুষ্কা দত্তগুপ্ত *
লালপলাশ, শিমুলে ঘেরা পুরুলিয়ার পথে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখে পরে
একদল পাখি পাহাড়ের গায়ে উড়ে যাচ্ছে পুরুলিয়ার শ্রীরামপুর গ্রামের কাছে
শিদামপুর অঞ্চলে অযোধ্যা পাহাড়ের একটি ছোট খাটো নিরেট পাথুরে পাহাড়ের গায়ে ১৯৯৬ সালে
এক ঝাঁক পাখি আঁকার সিদ্ধান্ত নেন কলকাতার আর্ট কলেজের ছাত্র চিত্ত দে। সেই অনুযায়ী চিত্ত দের তত্ত্বাবধানে
বেশ কিছু শিল্পী মিলে এই নিরেট পাথরের পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে পাখি আঁকার কাজ শুরু
করেন তারা। সেই থেকে তারা আঁকতে থাকেন সারা পাহাড় জুরে ছোটো বড়ো এক ঝাঁক
পাখির ছবি। শান্ত সবুজ পরিবেশে হঠাৎ পাহাড় জোড়া এক ঝাঁক উড়ন্ত পাখির ছবি
দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সেই থেকে পাহাড়ের নাম হয় “পাখিপাহাড়”।
 |
| পাখি পাহাড় |
আমরা পুরুলিয়ার পাখি পাহাড়কে জানার উদ্দেশ্যে ৫ই মার্চ তারিখে
বেরিয়ে পড়লাম। তারপর হাওড়া স্টেশন থেকে লালমাটি এক্সপ্রেস করে রওনা দিলাম সেই
উদ্দেশ্যে। ৫ ঘন্টার
যাত্ৰা শেষে পৌছালাম সেই বহু আকাঙ্খিত মুদিদি গ্রামে পাখি পাহাড়ের কোলে। শেষ ফাল্গুনী ঝরা পাতায় আবৃত মেঠো পথ ধরে আমরা সারি বেঁধে
গন্তব্যে পৌছালাম।
 |
| মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য |
 |
| পলাশ ফুল আমাদের স্বাগত জানাল |
১৯৯৬
সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতার আর্ট কলেজের ছাত্র চিত্ত দে কে পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডিতে
৮০০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের পাখির চিত্র খোদাই করবার প্রস্তাব দেন। চিত্ত দে এই সবই পাথুরে পাহাড়ের সন্ধান করতে শুরু করেছিলেন
যা পাখির চিত্রের উপর ভিত্তি করে ভাস্কর্যকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। এখানে খোদাই করা পাখির ডানার বিস্তৃতি ছিল ৫৫ ফুট। প্রায় ৬৫ টি পাখি খোদাই করা হয়েছিল এখানে। প্রাথমিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা
অনুদান পায়। পাহাড়ের
কাজ শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। এখনো
পর্যন্ত এই কাজ ৪০% হয়েছে। যার ৬০ % কাজ বাকি এখনও। পাখি পাহাড়কে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফেরার পথে অস্তমিত সূর্য
জানান দিলো যে পুরুলিয়ায় থাকার মেয়াদ একদিন ফুরালো আমাদের।
 |
| পাখি পাহাড়ে স্থাপত্যের কাজ চলছে |
 |
| পাথরের গায়ে ফুটে উঠেছে শিল্পকর্ম |
পরদিন
সকালটাও অনেকটা একই রকম ভাবে শুরু হলো। মুদিদি
গ্রামটাকে ঘুরে দেখলাম সেদিন। শীতকালের
আমেজ তখনও সেখান থেকে পুরোপুরি চলে যায়নি। হালকা হিমেল সকালে অনেক গ্রামবাসীকে দেখলাম গোল হয়ে বসে
আগুন পোহাচ্ছে। আমরাও
ঘুরে দেখছিলাম গ্রামের মানুষদের তৈরী সব্জি ক্ষেত। মেঠোপথের দুপাশে পলাশ ফুলগুলো শেষ বসন্তের সৌন্দর্য নিয়ে
দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ
ছন্দ কাটলো, যখন শুনলাম আগের রাতেই বন্য হাতির আক্রমণ ঘটেছে গ্রামের
পশ্চিম সীমান্তের বাড়ি গুলোতে। আমরা
ছুটে গেলাম সেখানে। গতরাতে
হাতি সেই জায়গাতে তান্ডব চালিয়েছে এবং ফলস্বরূপ গ্রামবাসীর কাঁচা বাড়ির অর্ধেক ভেঙ্গে
পড়েছে।
 |
| আগের রাত্রে হাতির তান্ডবে ভগ্ন বাড়ি |
সেই দিন এই সমস্ত ঘটনা সামলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে
গেছিল। পরের দিনই ফেরার ট্রেন। পুরুলিয়া, পাখিপাহাড়, লালমেঠোপথ, পলাশফুল, এইসব কিছুকে ফেলে কলকাতায় গতানুগতিক জীবনে ফিরে এলাম।
 |
| উদার প্রকৃতি যেন ডানা মেলেছে আমাদের সম্মুখে |
 |
| বিদায় মানভূম, আবার দেখা হবে |
কলেজে
যাবার পরে ভাবলাম আমাদের বিভাগ থেকে যে ভুগলিয় প্রকাশিত হয় যেখানে একটি ভ্রমন বিষয়ক
প্রবন্ধ লেখা যেতেই পারে। তাই আমরা
ভাবলাম ফেলে আসা স্মৃতিগুলির একটু স্মৃতিচারণ করা যেতেই পারে ..............
*ছাত্রী, সাম্মানিক, তৃতীয় সেমেস্টার
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন