আয়লা বিপর্যয়
১৯/১০/২০১৭
তিথি
মৃধা*
দ্বিতীয় ভারতীয় গ্রীষ্মপ্রধান ঘূর্ণিঝড় দ্বারা উত্তর ভারতের বহু মানুষ আক্রান্ত হন 2009 সালে। এই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে। অপেক্ষাকৃতভাবে এই ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ব্যাপক শক্তিশালী। কলকাতা থেকে 950 কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত সুন্দরবন এলাকায় এটি সৃষ্টি হয় মৌসুমী বায়ুর আগমনের ফলে। এই ঘূর্ণিঝড়টির ফলে প্রবল ঝড় ও বন্যা হয় এবং সমুদ্রের জল পানীয় জলের সঙ্গে মিশ্রিত হওয়ায় পানীয় জল দূষিত হয়ে ওঠে। এর ফলে পুকুরে চাষ করা মাছের মৃত্যু হয়। পানীয় জল সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত নলকূপ এবং কুয়ো গুলিতে ঝড় বৃষ্টির ফলে মাটি কাদা ইত্যাদি জমা হয়ে জল সরবরাহের স্থানগুলি বন্ধ হয়ে যায়। জনসাধারণের ব্যবহৃত শৌচালয় গুলিতে বন্যার জল প্রবেশ করায় ওখানকার নোংরা আবর্জনা জলের সাথে মিশ্রিত হয়। নর্দমার নোংরা জল এবং পশুপাখির পচা গলা মৃতদেহ জলের সাথে মিশে সমস্ত জলাশয়কে দূষিত করে তোলে। যার ফলে লোকালয়ে কলেরা, জন্ডিস এর মত মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি এলাকায়। বন্যার আবির্ভাবে সমস্ত জনসাধারণের ঘরবাড়ি জলের ধাক্কায় ভেঙে তলিয়ে যায় এরফলে মানুষেরা হয়ে যায় অসহায় ও গৃহহীন। তারা সকলে কোন উঁচু স্থানে এবং সরকারি বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নেয়।
![]() |
| বিধ্বস্ত বাড়ি |
জনসাধারণের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য না থাকায় তারা অনাহারে ভুগছিল। সরকারি রক্ষা কর্মীগণ জনসাধারণের কাছে খাদ্য এবং পানীয় পৌঁছে দিলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে অধিকাংশ সময়ই তারা অনাহারে কাটিয়েছিল। রাস্তায় স্থানে স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টির জল জমা হওয়ায় ওখানে মশার উপদ্রব বেড়ে ছিল এবং এর ফলে মশা জনিত বহু রোগ যেমন-ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সমুদ্রের লবণাক্ত জল প্রবেশ করার ফলে কৃষকদের চাষ-বাস এর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। তাদের ফসল সমুদ্রের লবণাক্ত জলের নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে খাদ্যের অভাব আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
![]() |
| বিধ্বস্ত বাঁধ |
রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতায় অনেক ত্রাণশিবির কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয় রাজ্যের বিভিন্ন বন্যা পীড়িত এলাকায়। নৌবাহিনীকে উদ্ধার কর্মে কর্মরত করা হয়। এরপরে মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার দিকে ফিরে যেতে শুরু করল। তবে মানুষ নিশ্চিত ছিল না যে তারা তাদের পরবর্তী জীবনে ফিরে যেতে পারবে কিনা! বন্যার পরে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় যেমন- গোসাবা, চুনাখালী ইত্যাদি। যদিও গ্রামের প্রতিটি স্থানে বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাট সুষ্ঠুভাবে গড়ে ওঠেনি। তবুও পরিবেশের মধ্যে সমস্ত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও মানুষ সমস্ত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নিজেদের দৈনন্দিন কাজে মনোনিবেশ করে।
![]() |
| বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি গাছপালা |
*সাম্মানিক প্রথম
বর্ষ, ২০১৭



মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন