অযোধ্যা অভিজ্ঞতা
১৯/১০/২০১৭
তারা মণ্ডল*
বিস্তৃত ফাঁকা মাঠ, গ্রীষ্মের অধিক উষ্ণ বাতাস ও শীতের কনকনে শীতল হাওয়া এই প্রকৃতি আমার ভূমি। যদিও জন্মেছিলাম মহানগরীর (আসানসোল) মাটিতে। তবুও জন্মের পর থেকে এই প্রকৃতির বৈচিত্র্যের মধ্যে বড় হয়েছি।
হ্যাঁ, আমি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জেলা পুরুলিয়ার কথা বলছি। খাড়া আর ৬৬৫ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন অযোধ্যা পাহাড় পুরুলিয়ার ভৌগলিক বৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম।পাহাড়ি রাস্তা, বামনী ফলস, আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম ও অনেক ছোট ছোট পাহাড় নিয়ে গঠিত অযোধ্যার ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষের মনকে স্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট করে তোলে।
প্রথমবার অযোধ্যা গিয়েছিলাম ক্লাস নাইনে স্কুল থেকে সার্ভে করার জন্য। সিরকাবাদ ও বাগমুন্ডি পূর্ব পশ্চিমে অবস্থিত এই দুই রাস্তা দিয়ে অযোধ্যায় যাওয়া যায়। তিনটে বাস ভোর থেকে বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে অযোধ্যা যাত্রা শুরু করে এবং নির্দিষ্ট সময় মতো দুই বাস অযোধ্যায় পৌঁছে যায়। বেলা এগারোটা নাগাদ আমরা ভাবছি আমাদের তো দশটার সময় অযোধ্যা পৌঁছানোর কথা কিন্তু এখন বাজে বেলা এগারোটা। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা অন্যান্য সবাই ভাবছে আরেকটি বাস এখনও আসছে না কেন? কিছুক্ষন পর জানতে পারলাম বাসের ড্রাইভার রাস্তা ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছে। ফলস্বরূপ সেদিন তো আর সার্ভে করা হয়নি বরং আপার ড্যাম ও বামনি কলসের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে ভালো খাবার খেয়ে আবার স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। সন্ধ্যার সময় ফেরার পথে পাহাড়ি রাস্তায় একদল হাতির আগমন ঘটে। তিনটে বাস লাইট বন্ধ ও আমরা কথা বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। পরে হাতি চলে গেলে, আবার যাত্রা শুরু হয়।
দ্বিতীয়বার ক্লাস ইলেভেন এ পৌষ সংক্রান্তির সময় আমার বান্ধবীর বাড়ি থেকে বাড়ির লোকেদের মিথ্যে কথা বলে অযোধ্যা ঘুরতে গিয়েছিলাম। বাইকে অযোধ্যা যাওয়ায় সেবার প্রথম বুঝেছিলাম অযোধ্যার পাহাড়ি রাস্তা বেশ দুর্গম। যারা কোনোদিনও পাহাড়ি রাস্তায় যাননি তারা প্রথমবার যদি বাইকে অযোধ্যা গিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে গাড়ি উল্টে যাওয়ার মতো আশঙ্কা অবশ্যই থাকতে পারে। সেখানকার আবহাওয়া হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তিত হয়। যেমন রাস্তায় যাওয়ার সময় হঠাৎ কোনো জায়গায় গরম বাতাস আবার কিছুটা রাস্তায় গিয়েই শীতল বাতাস। সেখানকার জনজীবন যে কতটা কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে জেগে আছে তা প্রত্যক্ষদর্শন না করলে বোঝা যায় না। পাহাড়ি অনুর্বর মাটিতে ধান, সর্ষে ও অন্যান্য সবজির চাষ ও বাজারের দূরবর্তী অবস্থান। স্বল্প সংখ্যক বিদ্যালয় , অনুন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থা , পানীয় জলের অভাব , শীত গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য সবকিছু মেনে নিয়ে সেই প্রতিকূল পরিবেশে তারা কিভাবে অভিযোজন করে চলেছে।
তৃতীয়বার কলকাতায় 'Himalayan's Beckon’ ক্লাব থেকে মাঠাবুরু Basic Rock Climbing
course –এর জন্য গিয়েছিলাম। পুরুলিয়ার মেয়ে হওয়ায় পুরুলিয়ার শীত গ্রীষ্মের ব্যাপক প্রাধান্য , জলের অভাব এই সমস্ত কিছুর মধ্যে দিয়ে বড়ো হয়েছি কিন্তু সেই ২০১৭-র মাঠাবুরু তাঁবুতে চার রাত কাটানোর পর যখন গায়ে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরলাম তখন মা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেননা যে এখানকার মেয়ে এখানকার শীত সহ্য করতে না পেরে জ্বরে ভুগছে। আমার বিশ্বাস কলকাতার যে সমস্ত ব্যাক্তি সেই কোর্সের জন্য অযোধ্যায় এসেছিলেন তারা হয়তো অযোধ্যায় এসে অযোধ্যার বৈচিত্র্য, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দৃশ্য ভালো ভাবে দেখতে পেলেননা; তবুও একটা কথা বেশ জোর দিয়ে বলতে পারি যে তাদের অযোধ্যা খুব ভালো লেগেছে এবং তারা দ্বিতীয় সুযোগ পেলে অবশ্যই অযোধ্যা পাহাড়ে আসবেন।
অপরূপ রূপে সাজিয়েছো তুমি এই অযোধ্যা পাহাড়কে
তোমার মেয়ে হয়ে আমি প্রণাম জানাই তোমার মাটিকে।।
*সাম্মানিক প্রথম বর্ষ, ২০১৭
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন