বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সমাজে তার প্রতিফলন
ডঃ জাহ্নবি মুখার্জি*

জনসংখ্যাতত্ব ভূগোলে জনসংখ্যা নিয়ে বা জনসংখ্যা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনবরত পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে থাকে আবার নানা পরিবর্তনও হতে থাকে। নতুন নতুন তত্বেরও জন্ম হয়। আমেরিকার Population Reference Bureau নামক একটি সংস্থা (Times of India August 23rd, 2018) ভারতের জনসংখ্যার বিভিন্ন বয়সের হ্রাসবৃদ্ধির পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। বলা হয়েছে যে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতেরও জনসংখ্যার বিভিন্ন বয়সের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটছে। যেমন ২০৫০ সালে শিশুর সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ কমে যাবে এবং বয়স্ক লোকের সংখ্যা (এখানে ৬৫ বা ততোধিকের কথা বলা হয়েছে) এখনকার থেকে ৩ গুন বৃদ্ধি পাবে। ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে শতকরা ২২.৫ হবে। বয়স্ক লোকের সংখ্যা প্রতি ছয়জনের একজন হবে।
এই প্রসঙ্গে বয়স্ক লোকেদের বৃদ্ধি ও বৃদ্ধির ফলাফল সম্বন্ধে একটি আলোচনা করা যেতে পারে। বয়স্ক মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ ও সংসারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বিভিন্ন প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণী বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেদের কথাই ধরা হচ্ছে। এই শ্রেণীর বয়স্ক মানুষেরা সক্ষম ও কর্মক্ষম। এঁরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। এঁদের জীবনপ্রণালীও উন্নত। এঁরা বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী কাজ করেছেন ও স্বাভাবিকভাবে সঞ্চয়ও করেছেন। অনেকেই আবার সরকারী পেনশনও পাচ্ছেন। অসুস্থ হলে চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন বা নিজেদেরও সেই সুবিধা নেওয়ার সংস্থানও আছে। সংসারের দায়িত্বও অনেক ক্ষেত্রেই সেইভাবে নেই। সন্তানদের লেখাপড়া শেষ হয়ে গেছে বা তারাও চাকরি বা অন্যান্য কাজে যোগ দিয়েছে। এঁরা সামাজিক দায় থেকে অনেকটাই মুক্ত এবং নিজেদের জীবন ইচ্ছেমত কাটাতে পারছেন। জীবনটাকে অনেকটাই উপভোগ করছেন। অনেক সময় বেড়িয়ে পড়ছেন। এখন অনেক ভ্রমণ সংস্থা হয়েছে যারা বয়স্ক লোকেদের সুন্দর করে দেখাশোনা করে ঘুরিয়ে আনছেন। ভোগ্যপণ্যের জগতও এঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আধুনিক জগতের যন্ত্রপাতির সমস্ত সুযোগ সুবিধা এঁরা ভোগ করছেন। এঁরা এখনও নানারকম সংস্থার সরকারী, বেসরকারী, ব্যাঙ্কে প্রভৃতিতে কর্মরত থাকছেন। অবসরের সময়ে সপ্তাহে দুতিনদিন অথবা কিছুটা সময় কাজ করছেন এবং সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। এখানে একটা কথা বলা যেতেই পারে এঁরা কারোর উপর নির্ভরশীল নন বরঞ্চ সমাজে বা সংসারে অনেক contribute করছেন। ভোগ্যপণ্যের নির্মাণকারীরা এঁদের কথা চিন্তা করে জিনিসপত্র তৈরি করছে। ওষুধ কোম্পানিও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করছে। সবাই ব্যবসা করে লাভ করছে। ভ্রমণ নির্ভর শিল্পেরও লাভ হচ্ছে।
আবার অন্যদিকে দেখতে গেলে দেখা যাবে বয়স্ক লোকেরা যুব সম্প্রদায়ের কাজে ভাগ বসাচ্ছেন না তো? যে কাজ একজন যুবা পুরুষ ও স্ত্রীকে দিয়ে করালে যে পারিশ্রমিক দিতে হত সেই কাজ অনেক কম পারিশ্রমিকে বয়স্ক লোকেদের দিয়ে করানো হচ্ছে। বয়স্ক লোকেরা শুধু যে পূর্বের থেকে অনেক স্বস্তিতে আছেন তা নয় এঁরা অনেক ক্ষেত্রে নানা সমস্যারও সম্মুখীন হচ্ছেন। আগেকার যৌথ পরিবার এখন নেই। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়াতে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হচ্ছে। এই বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা মানবিক দিকটি যেমন দেখা হয় আবার সেই সঙ্গে ব্যবসার দিকটিও থাকে। এঁরা একাকী হয়ে যাচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে অবসাদেরও শিকার হচ্ছেন।
বয়স্ক লোকেরা সমাজ ও সংসারে যেমন উপকার করছেন আবার বিভিন্নখেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

*অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও বিভাগীয় প্রধান 

মন্তব্যসমূহ

  1. চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির কারণে সমাজে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাবে। এঁরা যাতে সমাজের কাছে বোঝা না হয়ে ওঠে সেদিকে নজর দিতে হবে। এটা বর্তমান সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সমাজবিজ্ঞানীদের মনোযোগ দিতে হবে এই সময়কে কীভাবে সমাজকল্যানে কাজে লাগানো যায় তার গবেষণায় ও তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নে।
    প্রাবন্ধিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের নজরে এনেছেন। তাই তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পায়ে পায়ে প্রাসাদ নগরী...

এঞ্জেলবার্গের তিনটি দিন

সময়