যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে

নাফিসা ইয়াসমিন






যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে … খুব সহজ একটা কথা কিন্তু বড্ড কঠিন একটা কাজ। কোনো কিছুই ছাড়তে চাই না আমরা, সব কিছু নিজের করে পাবার এক অদম্য চেষ্টা তে আমরা রিক্ত হই, সিক্ত অশ্রু আমদের অন্তরকে করে নিঃস্ব। 

জীবনে একটা সময় আমদের সব ছাড়তে শিখতে হয়, তাতে যেমন আমরা ভালো থাকি তেমনই ভালো হয় আমাদের সাথে যুক্ত মানুষদের। মনে পরে ছোটো বেলায় আমাদের সবার এমন একটা খেলনা বই বা জিনিস ছিলো যা আমরা কোনো ভাবেই কাছ ছাড়া করতাম না, আজ সেই জিনিস গুলো কোথায় তার হদিস কে জানে। যে বন্ধুত্ব মনে হতো কোনো দিন বিচ্ছেদ হতে পারে না, আজ হয়তো সেই বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বছরের পর বছর। 

একটা সময় পর আমাদের সব ছেড়ে দিতে হয়। পাখির খাচার দরজাটা খুলে দিতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন একটা মুহূর্ত হলো যেতে দেওয়া। জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন সেই মানুষটা না সেই জিনিসটা প্রাসঙ্গিকতা হারায় আমাদের জীবন থেকে, আমরা যতোই তাকে আঁকড়ে ধরতে চাই না। আমাদের কাঙ্ক্ষিত এমন কিছু কাজ বা কিছু পাবার চাহিদা থাকতে পারে যেটা হয়তো আমাদের জন্য নয়। সেই যতোই আমাদের আন্তরিক চাহিদা হোক না। আমাদের কারোর জীবনই সরলরেখায় চলে না, চড়াই উৎরাই জীবনের অঙ্গ। পথের নানা বাঁকে অনেক কাউকে ছেড়ে এগিয়ে চলতে হয়। সারা জীবন কেউ সঙ্গে থাকতে পারে না। পৃথিবীতে যখন আসি আমার তখন যে মা- বাবা আমাদের সঙ্গে থাকে কালের অমেঘ নিয়মে তাদের বিদায় দিতে হয়। দীর্ঘকাল জীবন সঙ্গী হোক বা সন্তান তাদেরও কাছে বিদায় আমাদের নিতেই হয়। আমরা আমদের জীবনের প্রতি বাঁকে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই, তার একটা কারণ থাকে, কারণ শেষ হবার পর সবাইকে ছেড়ে দিতে হয় সে আমরা চাই আর না চাই। তাইতো যে জিনিস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না, খুশি মনে তাকে বিদায় জানানোই আমদের সুখী করে, মানসিক চাপ মুক্ত করে। এগিয়ে যাবার জন্য পাখি কে  খাঁচার দরজাটা খুলেই দিতে হয়।



*ছাত্রী, ২০০১ 

মন্তব্যসমূহ

  1. এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম, তবে মাড্যাম তোমার প্রবন্ধ পড়ে বুঝতে পারলাম খুব আন্তরিকতা দিয়ে লেখছ। লেখে যাও ভবিষ্যৎ আছে। শুভেচ্ছা রইল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পায়ে পায়ে প্রাসাদ নগরী...

এঞ্জেলবার্গের তিনটি দিন

সময়