বন্ধুত্বঃ ছেলেবেলা ও বড়বেলা
বন্ধু শব্দটা বলা যতটা সহজ হোক না কেন, বন্ধুত্বটা আবার সকলের আসেনা। হাজার হাজার বন্ধুদের ভিড়ে আমার কাছের , মনের মানুষ গুলোর সংখ্যা বরাবরই ভীষণ কম। তবুও কখনও ছিঁটেফোঁটাও আক্ষেপ হয়নি। যে গুটিকয়েক আছে আমার রত্নভান্ডারে, তাঁদের সাথে সম্পর্কটা এতটাই পরিপাটী যে জীবনে বন্ধুত্বকে একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। এনারা কিন্তু আবার Facebook, Instagram স্পেশাল নন। প্রত্যেকটির সাথে সম্পর্ক নিজেদের সবটুকু দিয়ে। এই যেমন ধরুন না যেটিকে সেই ছোট্টবেলা থেকে best friend বানিয়ে ফেলেছিলাম , হঠাৎ করেই tata bye bye করে অন্য স্কুলে পাড়ি দিল। কী ভাবছেন, এখানেই শেষ? নাহ্! তাহলে বন্ধুত্বটা খেলো হয়ে যেত না? আমরা বেশ টিকে গেলাম, land phone,
greetings card, post card এ চিঠি লিখে। বন্ধুত্বে বজ্রাঘাত টা তো তখন এল, যখন হাইস্কুলের গন্ডির কাছাকাছি এসে, অংক কষায় অনীহার জন্য তিল তিল করে গড়া মণিমাণিক্য গুলো ছিটকে গেল। ভাবলাম সব চুকে গেল বোধহয়। সব আবার ঠিক হতে লাগল। কিছু নতুন এল,আবার কিছু ফুরুৎ হয়ে গেল। তবে খাঁটি হীরাগুলো রয়ে গেল। এদের একজনের স্কুলের শেষ দিনে কি কান্নাটাই না কেঁদেছিলাম দুটিতে মিলে, সে যাকে বলে নাকের জলে, চোখের জলে আর কি। মজার ব্যাপারটা কি জানেন? বছর পনেরো বাদে সেই কথা মনে করে খুব হাসি একসাথে। শুরুতে বলেছিলাম না যে রত্ন সবগুলি, না হলে স্মৃতিটা যে ফিকে রয়ে যেত। আর একজন আছে যে কিনা ঠিক আমার আর জন্মের মা। মা-ই বটে সেই স্কুলে থাকতে টিফিনবক্স টা দায়িত্ব নিয়ে খালি করা থেকে শুরু করে, প্রথম আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো, বিয়ের পর বরণ করে ঘরে তোলার মত গুরুদায়িত্ব আজ ও হাসিমুখে সারছে। আর একটি আছে বেশ নড়বড়ে গোছের, ও মা! বৌভাতের দুপুরে আমার পাতের আস্ত মাছের মাথা টা দেখিয়ে বেশ রাশভারি গলায় বলল, "ওটা অনেক কষ্ট করে restaurant থেকে ভাজিয়ে এনেছি, পুরো খাওয়া চাই।" মনে মনে হাসললাম চোখের কোণ চিক্ মেরে উঠল বই কি। কখনও পুণ্যি না কামালে এগুলি কে পাওয়া যায়? আপনি ই বলুন। শুধু আমি ভাগ্যবতী মনে করছেন? এমন বেশকিছু প্রাণী আছে যাদের জামাকাপড় থেকে শুরু করে জীবনের বেশ কিছু decision রীতিমতো meeting করে নিতে হয়। সব মিলিয়ে আমার এই রত্নগুলি নবরত্ন কে হার মানায় না কি? বলাই বাহুল্য আমার সঙ্গীটি কিন্তু আবার আমার বিশেষ বন্ধু। ওঁদের কথা একবার শুরু করলে রাশ টানা ভারি কঠিন।
তবে নিয়ম করে দেখা সাক্ষাৎ, ঘুরে বেড়ানো কোনোটাই তেমন হয়না । কিন্তু " ওই, কি করছিস" টা দিব্যি টিকে আছে।
এ তো গেল প্রাক্ করোনা পর্বের কথা, এবছরের গোড়ার দিক থেকেই এই মারণ ভাইরাস টিকে নিয়ে আমার আপনার বাড়ি থেকে শুরু করে পৃথিবীর আর এক প্রান্তে থাকা ট্রাম্প মশাই ও ব্যতিব্যস্ত। সব্বাই টলমল আর কি। তা এইসব এর চক্করে আমাদের new normal জীবনে আর একটা শব্দ জুড়ে গেল, হ্যাঁ ঠিক ই ধরেছেন। শব্দটা হল "social distancing "আমার আপনার আপামর জনসাধারণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা যার জন্য। আগেই বলেছি যে আমার বন্ধু বলতে আছেই গুটিকয়েক। 2020 যেন সেটাও সহ্য করতে পারল না। আরও গুটিয়ে গেল বোধহয় আমার আশপাশ। প্রথম দানেই গেল ছাপোষা মার্কা চাকরীটা, একে একে interview বানচাল , খালি পকেটের ভেতর থেকে EMI এর জন্য bank গুলো গুঁতোগুতি করছে, আর কত্ত সাধের girls trip টা ও পন্ড হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে দিন কাটছিল সবে, ব্যস কাজে লাগিয়ে ফেললাম এযুগের সেরা হাতিয়ার social networking কেই। কোচবিহার থেকে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক সব যেন একাকার হয়ে গেল। ঘরকন্নার ফাঁকেই video call, messaging দেদার চলল। উফ্ যেন একরাশ ফুরফুরে বাতাস পেলাম। মুখভার করা জন্মদিনটাও মুচকি হেসে উঠল, যখন ভিনরাজ্যের সেই কাছের মানুষ গুলো জটলা পাকিয়ে video call করে বসল। কিন্তু তা ও যেন সব ফ্যাকাসে , ঘরের লোকের সাথে সাথে ওদের সবার জন্য মনটা আনচান করতই। একবার তো ছুট্টে চলে গেলাম মাম্মা র কাছে। ওহ্ এই কিন্তু সেই আর জন্মের মা। মাস কয়েক পর, মায়ে মেয়েতে দেখা হয়ে খুশিতে ডগমগ প্রান রাস্তা ব্যালকনি এক করে দিল। ঘরে গিয়ে বসার সাহস দেখাইনি আর, পাছে আমার জন্য ওদের কিছু হয়ে যায়। মনটা বেশ নুইয়ে গেল। কোথাকার এক ভিনদেশি রোগ, কি বিশ্বজোড়া ক্ষমতা তার ভাবা যায়?
এক ঝটকায় সব উল্টে পাল্টে দিয়ে ছাড়ল।যাইহোক শিরোনামে এখন দীর্ঘায়িত lockdown এর পর new normal এ ফেরার পালা। কি হল? ভুরু কুঁচকে কি ভাবছেন বলুন তো? আশে পাশের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সবাই ছিটকে যাব? নাহ্, এ যাত্রায় ও তা হল না। আমার রত্নভান্ডারে খানকতক রত্ন আগের মতোই চকচক করছে। লড়াই এর শেষ দান আমরাই দিলাম আর কি ।
Jano amar moner katha --- khub bhalo laglo lekha ta! -- Sudeshna Sanyal
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনখুব ভালো লিখেছো দিদি
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনHalka mejaj e khub serious katha bolechho..aamader sakoler i ei abhiggota hochhe..bhasa khub mojbut..aaro lekho..
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনdarun re
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুন